বাহরাইনে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ সেবা
বাহরাইনে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দুতাবাসের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সেবা কার্যক্রম বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে উপকৃত হচ্ছে ভুক্তভোগী অনেক সাধারণ প্রবাসী।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি প্রবাসী কর্মী আইনি সেবা পেয়েছেন দূতাবাস থেকে।
দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাহফুজুর রহমান জানান, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন, চুক্তি অনুযায়ী বেতন না পাওয়া, নিয়োগকর্তার হয়রানিসহ বিভিন্ন আইনি জটিলতায় পড়তে হয় বাংলাদেশি কর্মীদের।
বাংলাদেশি আইনজীবী না থাকায় এবং স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে না পারা ও বোঝার অসুবিধায় ভুক্তভোগী অনেকেই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না।
এমন বাস্তবতায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনি সেবা এবং সঠিক পরামর্শ দিতেই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ দূতাবাস।
প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দূতাবাস ভবনে বিনামূল্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন আইনগত সমস্যার পরামর্শ দেন অভিজ্ঞ আইনজীবী।
এছাড়া সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে অফিস চলাকালীন আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। তাছাড়াও ২৪/৭ চালু হটলাইনে যোগাযোগ করে আইনিসহ যেকোনো পরামর্শ নিতে পারবেন প্রবাসীরা।
দূতাবাসে যোগাযোগ করে সেবা পেয়েছেন কুমিল্লার আজিজুল হক। দীর্ঘদিন বাহরাইনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। নিয়োগকর্তার অভিযোগে কিছুদিন আগে বাহরাইন সিআইডির হাতে আটক হন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অভিযোগ বহাল থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী আইনি সহায়তা চাইলে দূতাবাস নির্ধারিত আইনজীবী আদালতের মাধ্যমে তাকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করে।
তিনি বলেন, 'অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়ে আমি অনেক খুশি। বাংলাদেশ দূতাবাসের সেবা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমার বিশ্বাস এ সেবার মাধ্যমে আমার মতো শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি উপকৃত হবে।'
আরেক বাংলাদেশি রুবেল ইমানও নিয়োগকর্তার অভিযোগের শিকার হন। সমাধানে বিভিন্ন দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত দূতাবাসের শরাণাপন্ন হন এবং দ্রুত সমাধান পান।
কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, 'বর্তমানে আমি ভিসা নবায়ন করতে পেরেছি। দুচিন্তা মুক্ত হয়ে কাজে মন দিয়েছি।'
এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিটি সংগঠকরা। বাহরাইন সরকারের নিবন্ধিত কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আসিফ আহমেদ বলেন, 'বাহরাইনে প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির অধিকাংশই সাধারণ কর্মী। বিভিন্ন কারণে তারা আইনি সমস্যা পড়েন। অজ্ঞতা আর পেশাদার আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্যে না থাকায় উত্তরণের খুঁজে পান না। সেক্ষেত্রে দূতাবাসের এ উদ্যোগ তাদের জন্য সহায়ক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
আরেক কমিউনিটি নেতা সেলিম রেজা বলেন, 'দীর্ঘদিন নানাভাবে হয়রানি হয়েছে রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় শীর্ষ ১০ অবস্থানে থাকা বাহরাইনপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। অজ্ঞতার সুযোগে কিছু অর্থলোভী চক্র আইনি পরামর্শের নামে লুটে নিয়েছে তাদের। তাই দূতাবাসের বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও সেবা পদক্ষেপে আশার আলো পেয়েছে বঞ্চিত প্রবাসীরা।'
চাহিদার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এই সেবার আওতা বাড়ানো হবে বলে জানান শ্রম সচিব।
লেখক: বাহরাইনপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক
Comments