অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদন

নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে যাবেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এমন একটি সময়ে ভারত সফরে যাচ্ছেন, যখন 'বিবিসি' নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রচারের পর গোটা বিশ্ব জুড়ে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০০২ সালে মোদি যখন ভারতের গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সেখানে দাঙ্গায় অন্তত মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলমান। এই ঘটনায় মোদিকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১০ সালে মোদিকে মামলা থেকে খালাস দেন।

ওই দাঙ্গার পর প্রায় ১ দশক মোদির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

ভারত সফরের প্রাক্কালে গণমাধ্যমের নানা প্রশ্নের জবাব দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ভারত সফরে তিনি মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

মূল প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।'

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ২ দশক আগে গুজরাট দাঙ্গায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার অভিযোগকে 'ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি বিষয়' বলে বর্ণনা করেছেন।

ভারতে বিবিসি কার্যালয়ে সরকারের অভিযান এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনামূলক একটি ডকুমেন্টারি ব্লক করার পর অস্ট্রেলিয়া ভারতকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে চাপ দেবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান গণমাধ্যম এসবিএস নিউজ আজ বৃহস্পতিবার তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, 'বিশ্ব মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করেছে যে ২০১৪ সালে মি. মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে মুসলিমবিরোধী হামলা বেড়ে চলেছে। এ ছাড়া, অভিযোগ আছে যে ২০১৯ সালে বিতর্কিত "নাগরিকত্ব আইন" মুসলমানদের বাদ দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। যারা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।'

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিবিসির ডকুমেন্টারি "ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেইন' অভিযোগগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। যুক্তরাজ্য সরকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে দাঙ্গার সময় "দায়মুক্তির পরিবেশ" তৈরি করার জন্য মোদি প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ছিলেন।'

এতে আরও বলা হয়, 'ভারত সরকার গুজরাটকে কেন্দ্র করে বিবিসির তথ্যচিত্রের প্রথম পর্ব নিষিদ্ধ করার জন্য জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। বিবিসির নয়াদিল্লি অফিসে তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তল্লাশি চালায়। সাংবাদিকদের ফোন জব্দ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।'

এসবিএস নিউজ লিখেছে, 'ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযানটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হনন বলে গোটা বিশ্বে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভের জন্ম দেয়। মোদি সরকারকে স্বাধীন সংবাদপত্রের ওপর ক্র্যাক ডাউন করার অভিযোগ করে নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট সম্পাদকীয় লিখেছে।'

বিবিসির অফিসে অভিযান চালানোর বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া ও ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা কৌশলগত অংশীদার। আমরা নিয়মিত মানবাধিকারের সঙ্গে জড়িত থাকব।'

'ভারতে ধর্মীয় সহিংসতা বৃদ্ধি' সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। তবে বলেছেন, গুজরাট সহিংসতায় মোদির ভূমিকা 'মাঝামাঝি' ছিল।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

US enters Israel-Iran war. Here are 3 scenarios for what might happen next

Now that Trump has taken the significant step of entering the US in yet another Middle East war, where could things go from here?

26m ago