দ্বৈত নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব বাতিল, শঙ্কিত বাংলাদেশিরাও

দ্বৈত নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব বাতিল, শঙ্কিত বাংলাদেশিরাও
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ান প্রাপ্তবয়স্ক যারা ১৯৪৮ থেকে ২০০২ সালের ৪ এপ্রিলের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। তবে তাদের অনেকেই বিষয়টি জানেন না।

বিষয়টি নিয়ে অনেক বাংলাদেশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশিদের অনেকেই দ্বৈত নাগরিক। অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া অনেকের সন্তানই বাংলাদেশেরও নাগরিক বানিয়েছেন।

১৯৪৮ সালের নাগরিকত্ব আইনের ১৭ ধারা বাতিল হওয়ার কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে।

২০০২ সালের ৪ এপ্রিল ফেডারেল সরকার আইনটি বাতিল করে বলেছিল, একটি নতুন বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে এই পরিবর্তনটি করা হয়েছে। তখন থেকেই প্রতি বছর ৭০০ দ্বৈত নাগরিক নিজেদের অজান্তেই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব হারাতে থাকেন। এটি কেবল তখনই বিভাগের নজরে আসে যখন দ্বৈত নাগরিকরা তাদের সন্তানদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।

সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

আইরিশ বংশোদ্ভূত ম্যাথিউ নিল একজন অস্ট্রেলিয়ান। তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে একটি আইরিশ পাসপোর্ট নিয়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব পান। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন যে, তার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের নববর্ষের প্রাক্কালে স্বরাষ্ট্র দপ্তর ৪১ বছর বয়সী নিলকে একটি ইমেল পাঠিয়ে জানায়, দ্বৈত নাগরিক হওয়ার কারণে তার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে।

ম্যাথিউ নিল তার পিতামহের আইরিশ ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই বাস করতে থাকেন।

২০২১ সালের শেষের দিকে মহামারি সীমানা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর তিনি এবং তার স্ত্রী সিডনিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়ে স্বরাষ্ট্র দপ্তর তাকে বলেছিল যে, তিনি তার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব হারিয়েছেন।

তিনি অবাক হয়েছেন এই ভেবে যে, অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং ২০০৮ সালে তার ছেলে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্র দপ্তর তাকে বলেছে, দ্বৈত নাগরিক হওয়ার কারণে ২০ বছর আগেই 'তিনি তার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব হারিয়েছেন।'

এটি একটি স্বল্প পরিচিত আইনের কারণে ছিল যে, প্রাপ্তবয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানরা যারা দ্বিতীয় পাসপোর্ট পেয়েছেন তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব হারাবেন।

নিল বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ান অধিকারের স্বয়ংক্রিয় ক্ষতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। 'এটা ছিল বিধ্বংসী। এটা ভয়ঙ্কর ছিল,' তিনি বলেন।

'আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটি এক ধরণের ভুল। এটি এখন আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দুঃখজনক পরিণতি হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

একটি বিবৃতিতে, স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে, ১৭ ধারার অধীনে নাগরিকত্ব হারানোর ক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ক্ষমতা নেই। তবে যারা তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন তারা এটি পুনরায় চালু করার জন্য আবেদন করতে পারেন।

ম্যাথিউ নিল তার নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আবেদন করেছেন।

প্রতি বছর দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করার কারণে প্রায় ৭০০ জন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব হারিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র দপ্তর গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

লিবারেল সরকারের তৎকালীন অভিবাসন মন্ত্রী ফিলিপ রুডক ১৭ ধারা বাতিল করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন, যারা বিদেশে জন্ম নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসে তাদের জাতীয়তা ত্যাগ করেছিলেন তাদের এটি পুনরায় গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ার কথা আমি ভাবিনি।

মাইগ্রেশন আইনজীবী ক্যারিন অ্যান্ডারসন বলেছেন, তিনি প্রতি বছর কয়েকজন ক্লায়েন্ট পেয়েছিলেন যারা ১৭ ধারার কারণে তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন এবং এটি তারা জানতেন না।

সম্প্রতি বাংলাদেশি একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন অভিবাসন মন্ত্রী ফিলিপ রুডকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের দেখা হয়। ১৭ ধারার বিষয়ে অনেক অস্ট্রেলিয়ানেরই স্বচ্ছ কোনো ধারনা নেই'এটা তার জানা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনি একটি রাস্তায় গতিসীমার বেশি গাড়ি চালিয়ে যদি বলেন ওহ, আমি জানতাম না যে এই রাস্তায় কত গতিসীমা ছিল। আমি অজ্ঞ ছিলাম। তাহলে কি ছাড়া পাবেন? আইনে অজ্ঞতার কোনো অজুহাত নেই।'

তিনি আরও বলেন, একজন অস্ট্রেলিয়ান অন্য দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিনা তা সাধারণত ওই দেশের সরকার অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়ে থাকে।

কেউ যদি না জেনে নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলেন তাহলে কী হবে? তার কি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে ভিসা লাগবে? এবিসি নিউজের এমন একটি প্রশ্নের জবাবে বর্তমান অভিবাসন মন্ত্রী অ্যান্ড্রু গাইলস বলেছেন 'নাগরিকত্ব হারানোর বিষয়টি কখনই প্রকাশ্যে আসে না। যারা অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে থাকেন তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হলে আইনের অধীনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদেরকে একটি 'সাবেক নাগরিক ভিসা' দেওয়া হয়। এটি একটি স্থায়ী ভিসা যা ব্যক্তিকে এখানে বসবাস করার অনুমতি দেয়। তবে ব্যক্তিটি দেশ ত্যাগ করার মুহূর্তে এটি শেষ হয়। পুনরায় প্রবেশের জন্য তাদের অন্য ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশী, তাদের অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট বাতিল করা হয় এবং তারা তাদের দ্বিতীয় নাগরিকত্বের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হন।

যারা অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা আবার অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে তাকে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

3h ago