অস্ট্রেলিয়ার ১ শতাংশ ধনী সেকেন্ডে আয় করেন ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা

অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ১ শতাংশ ধনী মানুষ টানা ১০ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার ৫০০ ডলার আয় করছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ তারা প্রতি মিনিটে আয় করছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি।

'অক্সফাম অস্ট্রেলিয়া'র প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনা মহামারির পর অস্ট্রেলিয়ান বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের পরিমাণ ৬১ শতাংশ বেড়েছে।

অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় ২০২০ সালের মার্চে ৩১ জন অস্ট্রেলিয়ান বিলিয়নিয়ার ছিলেন, যা ২০২২ সালের নভেম্বরে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে।

সম্পদের বৈষম্যের ওপর অক্সফামের বৈশ্বিক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট'।

এর ফলাফলে আরও দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষ গত ১ দশকে নীচের ৫০  শতাংশের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সম্পদ জমা করেছেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন সম্পদ তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ এই সম্পদের ৬৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার দখল করেছেন। বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ প্রতিদিন ৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

২০২০ সালে করোনা মহামারির পর থেকে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষ বিশ্বের বাকি ৯৯ শতাংশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করেছে।

২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চরম সম্পদ ও চরম দারিদ্র্য একই সঙ্গে বেড়েছে।

অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অ্যান্থিয়া স্পিঙ্কস বলেছেন, যখন অস্ট্রেলিয়া ও সারা বিশ্বে সাধারণ মানুষ খাদ্যের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য প্রতিদিন কষ্ট করছেন, তখন অতি ধনীরা তাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্নও ছাড়িয়ে গেছেন।'

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ধনীদের কর কীভাবে সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানদের জীবন পরিবর্তন করতে পারে।

তারা প্রকাশ করেছে, ৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের দেশটির কোটিপতিদের ওপর ২ শতাংশ, ৬৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের ওপর ৩ শতাংশ এবং বিলিয়নিয়ারদের ওপর ৫ শতাংশ করে ট্যাক্স আরোপ করে বছরে ২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব।

এই অর্থ ১ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য প্রতিদিন ৮৮ ডলার আয় সহায়তা প্রদান করার জন্য যথেষ্ট। এতে উপকৃত হবে প্রায় ৮ লাখ ৪৫ হাজার শিশু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে সরকার লাখো বাড়ির গ্যাস বিলের অনুদানে বিনিয়োগ করতে পারে, যা পরিবারগুলোকে প্রতি বছর তাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধে ১ হাজার ৯০০ ডলার পর্যন্ত সহায়তা দিতে পারবে।

করোনা মহামারি পরবর্তী ৪২ জন নতুন অস্ট্রেলিয়ানের এখন প্রায় ২৩৬ বিলিয়ন সম্পদ রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় বৈষম্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এমন দরিদ্রতা আর কখনো দেখা যায়নি। পৃথিবীতে এখন প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন ক্ষুধার্ত।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২ মিলিয়নেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান পরিবার গত ১ বছরে মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন।

একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৯৫টি খাদ্য ও শক্তি করপোরেশন ২০২২ সালে তাদের মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় যথাক্রমে ৫৪, ৫৯ ও ৬০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি মুনাফা হয়েছে।

অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অ্যান্থিয়া স্পিঙ্কস বলছেন, 'অতি ধনী ও বড় করপোরেশনের ওপর বেশি কর আরোপ করা হলো অসমতা ও জলবায়ু সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ এবং গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার চাবিকাঠি। আমাদের এটা করতে হবে উদ্ভাবনের জন্য, শক্তিশালী জনসেবার জন্য, সুখী ও স্বাস্থ্যকর সমাজের জন্য।'

বিশ্বব্যাপী অক্সফাম, দ্য ফাইট ইনক্যালিটি অ্যালায়েন্স, ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ এবং প্যাট্রিয়টিকের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়ারদের ওপর ৫ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক সম্পদ কর আরোপ করে বছরে ৩ দশমিক ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব।

এই অর্থ ২ বিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করতে পারে এবং নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

ICT act won’t have provisions for punishment of political parties

Says law adviser; provision of death sentence to remain

1h ago