অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত

সিডনির মেট্রোর ট্রেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মেট্রোরেল। এর উদ্বোধন হয়েছে গত ২৬ ডিসেম্বর। নতুন প্রযুক্তির পরিবহন জগতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

দেশের অধিকাংশ মানুষের আবেগ ও আলোচনা এখন মেট্রোরেলময়। উদ্বোধনের ১ সপ্তাহ পরও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রধান খবর মেট্রোরেলকেন্দ্রিক।

খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের মেট্রোরেলের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয়, নকশা ও ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো অস্ট্রেলিয়ার মেট্রোরেলের আদ্যোপান্ত।

সিডনি মেট্রো অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত রেলপথ। এটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় গণপরিবহণ প্রকল্প। অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র চালকবিহীন ট্রেন পরিষেবাও এটি।

সিডনির প্রথম মেট্রো 'নর্থ ওয়েস্ট লাইন' ২০১৯ সালের ২৬ মে চালু হয়েছে। প্রথম দিন বিনামূল্যে এতে ভ্রমণের সুযোগ ছিল।

প্রতিটি দিক থেকে ১৩টি মেট্রো স্টেশনে প্রতি ৪ মিনিটে পরিষেবাটি চলে। বর্তমানে এটি সিডনির তালাওং থেকে চ্যাটসউড পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় সেবা দিচ্ছে, যার বেশিরভাগই ভূগর্ভস্থ।

চালু হওয়ার পর থেকে একদিনের জন্যও এর চলাচল বিঘ্নিত হয়নি।

লাইনটি ২০২৪ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য শহর সিডনিতে সম্প্রসারিত হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে পুরো সিডনিতে ৪টি মেট্রো লাইন, ৪৬টি স্টেশন এবং ১১৩ কিলোমিটার নতুন মেট্রোরেলের নেটওয়ার্ক থাকবে।

সিডনি মেট্রোরেলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের মধ্যে লেভেল অ্যাক্সেস। দ্রুত যাত্রী উঠানো ও নামানোর জন্য ট্রেনের প্রতি পাশে ৩টি ডবল দরজা রয়েছে।

প্রতি মেট্রোরেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সব সময় ট্রেন বিশেষজ্ঞ একটি দল সিডনি মেট্রো পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করেন যে, সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে।

ট্রেনের ভেতরে হুইলচেয়ারের জায়গা, আলাদা অগ্রাধিকারের আসন এবং জরুরি ইন্টারকম রয়েছে।

মেট্রোরেলের পুরো এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সহজলভ্য। এ ছাড়া, প্র্যাম, লাগেজ ও সাইকেলের জন্য প্রতি ট্রেনে ২টি আলাদা জায়গা রয়েছে।

দ্রুত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য এই ট্রেনগুলোর সময় মেনে চলার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।

নতুন প্রযুক্তির ট্রেনটি তৈরি করেছে বিশ্বমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আলস্টম। এটি সিডনির জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এটি আন্তর্জাতিক মেট্রোপলিস ট্রেনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা সিঙ্গাপুর, বার্সেলোনা ও আমস্টারডামের মেট্রোসহ ২৫টি শহরে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় রেল নেটওয়ার্ক সিডনি মেট্রোর নকশা, নির্মাণ ও পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় নিরাপত্তায়।

প্রতিটি ট্রেনে ৩৮টি নিরাপত্তা ক্যামেরা রয়েছে এবং প্রতিটি ট্রেনের ভেতরে সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত দেখা যায়। এটি একটি বড় নিরাপত্তা সুবিধা। গ্রাহক সেবা সহকারীরা দিনে ও রাতে সবসময় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ট্রেন পর্যবেক্ষণ করেন।

অত্যাধুনিক অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের মাধ্যমে রয়েছে প্রতিটি ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ট্রেন কন্ট্রোলারদের সরাসরি যোগাযোগ।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের 'পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কমান্ড' মেট্রোরেল নেটওয়ার্কে নিয়মিত টহল দেয়।

প্রতিটি দিকে প্রতি ২ মিনিটে ১টি মেট্রোরেল আসা-যাওয়ার ক্ষমতা আছে। বিশ্বব্যাপী অন্যান্য মেট্রো সিস্টেমের মতো সিডনির নতুন মেট্রো রেলওয়ের প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী সেবার সক্ষমতা আছে।

সিডনি মেট্রো নর্থ ওয়েস্ট লাইনে অবস্থিত হিলস শোগ্রাউন্ড স্টেশন প্লাজায় বর্তমানে একটি জীববৈচিত্র্য পরীক্ষা চলছে।

স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর জোর দিয়ে ১০০টিরও বেশি জাতের গাছপালা রোপণ ও পর্যবেক্ষণ এই পরীক্ষার অংশ। পরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো, কোন উদ্ভিদের জাতগুলো সবচেয়ে স্থিতিস্থাপক, তা নির্ধারণ করা। পরীক্ষা শেষ হলে সেই স্থিতিস্থাপক উদ্ভিদগুলো প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

সিডনি মেট্রোরেলের ভাড়া সাধারণ ট্রেনের থেকে সামান্য বেশি। ২০ থেকে ৩৫ কিলোমিটারের ভাড়া ৩ ডলার ৬০ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫০ টাকা। ৩৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটারের ভাড়া ৩৩৬ টাকা।

সিডনি মেট্রোরেলের গতি ঘণ্টায় সাধারণত ১০০ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গতি ১৩০ কিলোমিটার।

গত বছর সিডনি মেট্রো মাত্র ১৩টি স্টেশনে চলাচল করে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিস্ময়কর আয় করেছে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda leaves London for Dhaka in air ambulance

Fakhrul urges BNP supporters to keep roads free, ensure SSC students can reach exam centres

12h ago