পঙ্গু হাসপাতাল: ঈদের ছুটিতে বেশি রোগী
ঈদের ছুটিতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বা পঙ্গু হাসপাতালে রোগীর ভিড় কমেনি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রোগী ও স্বজনদের ভিড় অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি।
আজ বুধবার সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কোন বেড খালি নেই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে অনেক রোগীকে দেখতে পাওয়া যায়, যারা জরুরি অপারেশনের অপেক্ষায় আছেন।
হাসপাতালের ভেতরের বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে যায়, ভেতরে কোনো বেড ফাঁকা নেই। সব বেডে রোগী ভর্তি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে বর্তমানে ৮৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছু বেশি।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা সিএনজিচালক আবুল শেখের (৬০) সঙ্গে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকাল ৭টা দিকে যাত্রাবাড়ি কাজলা এলাকায় পেছন থেকে অজ্ঞাত একটি গাড়ির ধাক্কায় তার সিএনজি উল্টে যায়।
এ সময় তিনি আহত হন এবং তার বাম পায়ে আঘাত পান।
প্রথমে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যান ও পরে সকাল ১১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
তিনি বলেন, 'চিকিৎসকরা বলেছেন যে ২ ব্যাগ রক্ত রেডি করেন, জরুরি অপারেশন করতে হবে।'
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনি অপারেশনের সিরিয়াল পাননি।
বরিশাল শহরে ঈদের রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন সুমন হাওলাদার (২৬)।
তারা ৩ বন্ধু মোটরসাইকেলে ছিলেন। একটি মাহেন্দ্র গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তার বন্ধু নিরব ও লিমন মারা যান। সুমনের ডান পা ভেঙে যায়।
সুমনকে আজ সকালে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করার পর দুপুরেই তার জরুরি অপারেশন হয়।
সুমনের বোন মাসুদা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অপারেশনের পর কোনো বিছানা না পাওয়ায় অপারেশনের থিয়েটারের সামনে রোগী নিয়ে বসে আছি। আগামীকালকে বিছানা পাওয়ার চেষ্টা করব।'
ঢাকার ধামরাই এলাকায় আজ সকালে সেলফি পরিবহন ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আশরাফুন্নেছার (৫৮) ডান পা ভেঙে যায়।
তাকে আজ সন্ধ্যায় পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আনা হয়।
আশরাফুন্নেছার অপারেশনের জন্য রক্ত ও আনুষঙ্গিক ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করছেন তার আত্মীয়-স্বজনেরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত কর্মীরা জানান, অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে ঈদের দিন ও আজ অনেক বেশি রোগী আসছে।
ঈদের দিন পঙ্গু হাসপাতালে ২৯৯ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে একটি বড় অংশ রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, কয়েকজন নার্স ও ওয়ার্ডবয় ডিউটি করছেন। খুব প্রয়োজন হলে তারাই ড্রেসিং বা আনুষাঙ্গিক চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন।
তারা জানান, তবে গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তার আসেননি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের ছুটির কারণে শুধু জরুরি বিভাগ, জরুরি অপারেশন থিয়েটার এবং জরুরি ওয়ার্ডে ডাক্তার-নার্সরা ডিউটিতে আছেন।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মতো পঙ্গু হাসপাতালেও ঈদের ছুটিতে অমুসলিম চিকিৎসক-নার্সরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে চিকিৎসক এবং নার্সের কিছু সংকট থাকলেও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মুসলিম চিকিৎসক তাদের সহায়তা করছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল গনি মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল ঈদের দিন প্রায় ১০০ রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। আজও প্রায় সমান সংখ্যক রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে।'
রোগীদের বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা বলে জানান তিনি।
ডা. আব্দুল গনি মোল্লা বলেন, 'বেশিরভাগ রোগীর জরুরি অপারেশন করতে হবে। ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। কিন্তু অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।'
রোগীদের বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত বলে জানান তিনি।
Comments