ঈদের ছুটিতেও পঙ্গু হাসপাতালে রোগীর ভিড়
ঈদের ছুটিতেও রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ছিল রোগীদের ভিড়। ঈদের দিন ও পরের দিন হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে সারাক্ষণ রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। অপারেশন থিয়েটারের সামনেও ছিল দীর্ঘ লাইন। সেখানে কেউ রক্ত জোগাড়ে ব্যস্ত, কেউ ওষুধ কিনতে দৌড়াচ্ছে।
আজ শুক্রবার পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গণি মোল্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের দিন ও পরের দিন বহু রোগী এসেছেন সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি কোরবানির গরুর লাথি-গুতা খেয়ে হাত-পা ও কোমর ভেঙে।'
তিনি জানান, ঈদের দিন গরু সংক্রান্ত দুর্ঘটনা বেশি ঘটলেও ঈদের দিন ও পরের দিন বহু মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হাত-পা ভেঙে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঈদের পরের দিন গত বৃহস্পতিবার ৪৪৯ জন রোগী ভর্তি ছিল উল্লেখ করে অধ্যাপক আব্দুল গণি বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে হাসপাতালে প্রায় ৭০০ জনের মতো রোগী ভর্তি থাকেন। অধিকাংশ চিকিৎসক ঈদের ছুটিতে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জনের বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তিনটি অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) দেড়শ জনের মতো রোগীর অপারেশন করা হয়েছে। প্রতিটি ওটিতে প্রায় ৫০ জনের অপারেশন করা হয়েছে।'
'ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা স্থানীয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা না পেলে ঢাকায় চলে আসেন। ছোটখাটো বিষয়ে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে রোগীদের ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়,' বলেন তিনি।
অধ্যাপক গণি আরও বলেন, 'আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। রোগীদের স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
হাসপাতালের সুপারভাইজার জানান, হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ জনের মতো নার্স রয়েছেন। তাদের মধ্য ৮৫ জন অমুসলিম। তারাই মূলত এই সময় ডিউটি করছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ছয় বছর বয়সী তানিশা মনিকে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুরে থাকেন তানিশার পরিবার। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসার সামনে খেলছিল। সে সময় একটা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে তার ডান পায়ের দুটো হাড় ভেঙে যায়। এরপর পঙ্গু হাসপাতালে নিলে, সেখানে ভর্তির পর অপারেশন করা হয়েছে।
তানিশার চাচা কামরুজ্জামান মাসুম বলেন, 'ঈদের সময় দুর্ঘটনায় পড়া ছোট বাচ্চার চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসা পেতে কোনো অসুবিধায় পড়তে হয়নি।'
নরসিংদীর রায়পুরা থেকে গাড়ি দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জয়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজেদের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। পেছনে থেকে আরেকটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এতে তার বাম হাতে ভেঙে যায়। তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ডাক্তার না থাকায় ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ও কয়েকজন নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ চিকিৎসক ঈদের ছুটিতে থাকলেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তারা জানান, পঙ্গু হাসপাতালের রোগীদের অপারেশন ও ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া খুব বেশি কাজ থাকে না।
ছুটির সময়েও প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, 'ঈদের ছুটির কারণে এখন ডাক্তার-নার্স কম থাকলেও আমরা ঠিকমতো ম্যানেজ করেছি। তবে যারা ছুটিতে আছেন তাদেরও বলা হয়েছে সময় পেলে হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে। তাহলে তারা মনোবল পাবেন।'
এছাড়া ঈদ উপলক্ষে রোগীদের বিশেষ খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানান তিনি।
পঙ্গু হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালেও করোনা রোগীদের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ও কোরবানির পশুর লাথি-গুতায় আহতদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
Comments