টাকা দিতে দেরি করায় পেটে টিউমার রেখেই সেলাই

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

টাকা দিতে দেরি হওয়ায়, নারীর পেটের টিউমার রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার মানিকগঞ্জ জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী নারী আফরোজা আক্তারের পরিবার জানায়, গত শুক্রবার দুপুরে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা আফরোজাকে ভর্তি করা হয় হেলথ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে। রাত ২টার দিকে তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন করতে আনা হয় জেলা শহরের ডক্টর'স ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. খায়রুল হাসান এবং অ্যানাসথেসিস্ট ডা. আশিককে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। অস্ত্রোপচারের সময় ওই নারীর পেটের মধ্যে একটি টিউমার দেখতে পান চিকিৎসক।

ওই নারীর স্বামী নাঈম ইসলাম বলেন, 'আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে স্বল্পবেতনে চাকরি করি। সিজারিয়ান অপারেশন শেষে আমার স্ত্রীর পেটে টিউমার ধরা পরার পর, চিকিৎসক সেটি অপসারণ করতে ৩ হাজার টাকা চায়। আমি তাকে বলি যে টাকা দেবো, কিন্তু ভোররাতে টাকাটা সংগ্রহ করতে একটু দেরি হওয়ায় তিনি পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান। আমি, আমার পরিবারের সদস্যরা তাকে বার বার অনুরোধ করেছি। হাসপাতালের লোকজনও অনুরোধ করেছে। কিন্তু, তিনি কারও কথাই শোনেননি।

ওই নারী বলেন, 'এই টিউমার অপসারণ করতে আবার পেট কাটতে হবে। মাত্র তিন হাজার টাকার জন্য তিনি আমার সাথে এমন করলেন কেন ডাক্তার?'

হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকলেও সার্জারির চিকিৎসক অনেক রাতে থাকেন না। এ কারণে বিভিন্ন হাসপাতালের সার্জারির চিকিৎসকদের ডেকে এনে অপারেশন করাতে হয়। শুক্রবার রাতে অস্ত্রোপচারের পর রোগীর লোকজন আমাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেন। আমি চিকিৎসককে অনুরোধ করি, রোগী টাকা না দিলে আমি তাকে টাকা দেব। কিন্তু তিনি তা না করে, পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান। এটি অত্যন্ত অমানবিক। এতে আমার হাসপাতালেরও সুনাম নষ্ট হয়েছে।'

অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. খায়রুল হাসান বলেন, 'একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন পড়লে তার জন্য তো বাড়তি টাকা চাইতেই পারি। আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আবার অজ্ঞান করা লাগতে পারে। অথবা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে-এমন ভাবনা থেকেই আমি আর টিউমার অপসারণের অপারেশন করিনি। এটাতো খুব জরুরি না। পরেও অপারেশন করা যাবে।'

এ ব্যাপারে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. লুৎফর রহমান বলেন, 'আমি বিষয়টি জেনেছি। এটা অত্যন্ত অমানবিক। লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Family reunited after 18 years in Bangladesh

Family reunited after 18 years

Stranded in Malaysia, man finally comes back home

1h ago