লাল ফিতায় বন্দি ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট বা টিকা উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র প্রকল্প লাল ফিতার দৌরত্বে এক বছরেও কোনো অগ্রগতি দেখেনি।

এখন পর্যন্ত এর জন্য কেবলমাত্র কয়েকটি সভা হয়েছে এবং একটি প্রতিনিধিদল প্লান্টের জন্য নির্ধারণ করা স্থান পরিদর্শন করেছে। এতে করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে যে দেশের শীর্ষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম এই প্রকল্পটি শিগগির আলোর মুখ দেখবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সম্প্রতি একটি বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেছে।

সংসদীয় কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জটিল সরকারি প্রক্রিয়ার কারণে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়নি। আমার মনে হয় না যে আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ শুরু হবে।'

এই সংসদ সদস্য বলেন, 'তারা যে কর্ম পরিকল্পনা দিয়েছে, তা শেষ করতে এক বছর সময় লাগবে। তারপর তারা মূল প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু আমরা (কমিটি) আগামী ৬ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি।'

সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরও দ্রুত হতে পারত বলে অভিমত প্রকাশ করেন এই সংসদ সদস্য।

গত বছরের জুলাইয়ে টিকা উৎপাদন কেন্দ্র ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব তার সরকার প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করতে যাচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবে এই প্রকল্পের প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এক বছরেও করা হয়নি।

গত এপ্রিলে কর্মকর্তারা জানান, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রাক-ডিপিপি জমা দিয়েছেন, যার ভিত্তিতে তারা মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিদেশে পাঠানোসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা এখন অর্থায়নকারী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) চাহিদা অনুযায়ী ডিপিপি প্রণয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খুঁজছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত ৩ এপ্রিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করতে বলা হলেও ২২ মে অনুষ্ঠিত পরবর্তী বৈঠকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ইনস্টিটিউটটিতে থাকবে একটি ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট, একটি ভ্যাকসিন প্যাকেজিং প্ল্যান্ট এবং একটি গবেষণা ও উন্নয়ন সাইট।

সরকারি মালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের কারখানার কাছে ৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল সংস্থাটির।

বাস্তবে ইডিসিএল, এডিবি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক ছাড়া এ ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতিই হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গত ৩ এপ্রিল ইডিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে অনুষ্ঠিত একটি সভায় যোগ দেন।

সেখানে তিনি জানতে চান, অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে কি না। বিদ্যমান আইনে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় সরকারি ক্রয় বিধিমালা-২০০৮ সংশোধনের সুপারিশও করেন তিনি।

১১ মাসেও ইডিসিএল কেন ডিপিপি চূড়ান্ত করতে পারেনি, এমন প্রশ্নের জবাবে শারফুদ্দিন বলেন, 'অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবে আমরা পরবর্তী বৈঠকে প্রক্রিয়াটিকে আরও দ্রুততর করার বিষয়ে কথা বলব।'

গতকাল বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংসদীয় কমিটির গত বৈঠকের পর থেকে কোনো বৈঠক হয়নি এবং আমি নতুন কোনো অগ্রগতি সম্পর্কে জানি না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, 'আগস্টের মধ্যে আমরা যদি সব (ব্যাকগ্রাউন্ড) কাজ শেষ করতে পারি, তাহলে মূল প্রকল্প শুরু করতে পারব।'

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

12h ago