বরিশাল মেডিকেলে আইসিইউর জন্য হাহাকার, ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আনিসুর রহমান গত বুধবার করোনা পজিটিভ হয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। সে সময় তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২ থাকলেও, শুক্রবার অক্সিজেনের মাত্রা ৫০ এ নেমে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আইসিইউতে নেওয়া যায়নি এবং তিনি মারা যান।
আনিসুর রহমানের স্বজন জাহিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্টে তিনি ছটফট করতে থাকলে অনেক ছোটাছুটি, চেষ্টা-তদ্বির করে একটা আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারলাম না। শুক্রবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন পঞ্চাশে নেমে যাওয়ার পর বেলা বারোটার দিকে তিনি মারা যান।’
বরিশাল নগরীর রেবা কর্মকার শ্বাসকষ্ট ও করোনা নিয়ে সাত দিন আগে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সে সময়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৫ থাকলেও তা দ্রুত নেমে যাচ্ছিল। ৪৮ ঘণ্টা ধরে তার স্বজনরা আইসিইউ’র চেষ্টা করলেও, শেষ পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।
তার ছেলে সঞ্জু কর্মকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মৃত্যুর আগে অনেক চেষ্টা করেও, একটা আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারলাম না। চোখের সামনেই মা ছটফট করতে করতে শুক্রবার রাতে মারা যান।’
আজ শনিবার দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় তলায় অন্তত ৭৫ জন রোগী আছেন আছেন যাদের অক্সিজেন এর মাত্রা ৭০ এর নিচে। আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, একজন রোগী মারা গেলে তাকে নিচে রেখেই আরেকজনকে সেই শয্যায় দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের একজন সেবিকা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই হাসপাতালের ৩০০ শয্যার প্রায় নব্বই ভাগ রোগীতে পরিপূর্ণ। তাদের এক তৃতীয়াংশেরই স্যাচুরেশন ৭০ এর নিচে। এ মুহূর্তে তাদের আইসিইউ প্রয়োজন হলেও, মাত্র ২২টি আইসিইউর সব কটাতেই রোগী আছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার তাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এখন পর্যন্ত একটা আইসিইউ বেডের জন্য ৫৪ জন অপেক্ষায় আছেন।
করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘এখানে যারা আসছেন তাদের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি।’
তিনি জানান, শনিবার সকাল আটটার আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৩ জন মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, আইসিইউ পেতে ব্যাপক তদ্বির এবং চাপ প্রয়োগের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া, রোগীর স্বজনরা একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করছেন। এর ফলে, অক্সিজেন সংকট না থাকলেও, প্রয়োজনের সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার পেতে সমস্যা হচ্ছে।
ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নয় হাজার লিটার সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও হাসপাতালে ৩০০টি ১২ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে যা দিয়ে অক্সিজেন সংকট কেটে যাওয়ার কথা ছিল।’
বরিশালে বাসদের অক্সিজেন ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান হাবিব রুমন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের ৩০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সবকয়টি কেউ না কেউ ব্যবহার করছে। এখন আরও অন্তত ১০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ অত্যধিক। গ্রাম ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে রোগী না পাঠিয়ে, সরাসরি এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
‘এতে আমরা করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ২০০ থেকে ৩০০ বেড করেছি। কিন্তু, তাতেও পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাচ্ছে না,’ বলেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ছাড়া উপজেলা থেকে রোগী পাঠাতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Comments