বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন চলছে বাংলা চর্চা

'বাংলার ভাত নেই'—অহরহ শোনা যায়। এর মানে হলো, বাংলা পড়ে ভবিষ্যতে রুটিরুজির নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। এটা যদি সত্য হয় তাহলে বাংলাদেশের এতো এতো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ কেন?

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে বাংলা কেন পূর্ণায়তন বিভাগ? দর্শন, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা নৃবিজ্ঞানের মতো বিষয়ের চেয়ে কেন বাংলা সংখ্যায় অধিক? বাংলার বিচারে পিছিয়ে আছে এর প্রত্যেকটি বিষয়।

তাহলে কি বলা যায় বাংলার বাজার ভালো? অর্থনৈতিক বিবেচনা কেমন হবে জানি না, তবে সাদা চোখে তাকালে দেখা যায়, অনেকে দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়ালেও অন্য বিষয়গুলোর তুলনায় বাংলার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় ঢুকতে পারছেন দ্রুত। কেউ ঢুকছেন ব্যাংকে, বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ঢুকছেন সরকারি চাকরিতে; গড়পড়তা সত্য এই যে, বাংলা পড়ে আয়ের কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা করা যাচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন অন্য একটি উৎসে। এই বাংলা পড়া দিয়ে আমরা কী করব? বাংলা পড়ানোর উপযোগিতা কী? বাংলা বিভাগের পাঠ্যবস্তুগুলো হাল আমলের জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রয়োজন মেটাচ্ছে কি?

বাংলা বিষয়ে অল্প কিছু দিনের পাঠ ও পাঠদানের অভিজ্ঞতা বলে, বাংলা বিভাগে পরিবেশিত পাঠ্যবস্তু, পাঠদান কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পুরনো। বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পেছনে ভবিষ্যৎ নির্ধারণী কোনো পরিকল্পনা থাকে বলে মনে হয় না। প্রশ্ন থাকে কোন মৌল ভাব অবলম্বন করে গড়ে উঠছে বাংলা বিভাগ? ছোট্ট জবাব—বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ধরেই নেওয়া হয়, সংখ্যাগুরু বাঙালির দেশে বাংলা তো পড়াতেই হবে; না হলে বাংলা বিষয়ক পড়ালেখা ও উচ্চতর গবেষণা হবে কী করে? কথা সত্য। কিন্তু বাংলা বিষয়ক পড়ালেখা কী কাজে লাগছে দেশ ও জাতির?

বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটু নজরদারি চালালে মনে হবে, বাংলাদেশে বাংলা পড়ানো আর তার পেছনে টাকা ব্যয় করা মূলত জাতীয় অর্থের চূড়ান্ত অপব্যয়। জাতীয় পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের একদিনের বানান ভুল ও রীতিগত ত্রুটি ব্যাখ্যা করলেই এর প্রমাণ মিলবে। টিভি চ্যানেলগুলোর বানান ও ভাষারীতি শুনলে মনে হয়, অক্ষর শিখতে শিখতে বাংলা লিখছে-পড়ছে। সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর ভাষাত্রুটি সীমাহীন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর পরিচিতিমূলক বিবরণে মারাত্মক ভুল আছে। মনে হতে পারে, বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষা শিক্ষা তুলে দেওয়া হোক। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আবশ্যিক বাংলা পড়েও বাংলার সঙ্গে শিক্ষার্থীর আন্তরিক ঐক্য তৈরি হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ জীবনে বাংলা প্রয়োগে শুদ্ধতার প্রতিফলন ঘটছে না। আর এ প্রসঙ্গেই মনে হয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা জাতীয় চেতনা যদি সক্রিয়ই থাকবে, তাহলে ভুল বানান ও অপপ্রয়োগে কেন বাংলা লেখা হবে? ইংরেজি শব্দ বাক্যের ব্যাকরণ যথাযথভাবে লেখার প্রয়োজন বোধ করি কেন?

সত্যি কথা বলতে, বাংলা ভাষা প্রয়োগের সঙ্গে জাতীয় আবেগ বিশেষ কোনো ব্যঞ্জনা যোগাচ্ছে না। বাংলা পড়তে হয়, তাই পড়ানো হয়, শিক্ষার্থীরাও তাই পড়ে থাকে। ব্যাস। যুগের পর যুগ ধরে এই চক্র চলছে; অতএব থামা যাবে না। চাকার পরিধি ও গতি বাড়ানো প্রসঙ্গে বাতচিত কম হয় বলেই দৃশ্যমান। বাংলা বিষয়ক শিক্ষাবিদদের বেশির ভাগই জাতীয় আবেগে ভারাতুর; কিন্তু বাংলা অধ্যয়নকে শিক্ষাতত্ত্ব ও পেশাগত প্রয়োজন ও গুরুত্বের নিরিখে বিচার করেন না। বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার পেশাদারি গুরুত্ব ও 'অপরিহার্যতা' সম্পর্কে ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। অথচ পাঠ্যক্রমটির অন্য কোনো কোর্সের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। পুরো বিভাগকেই অসম্পৃক্ত রাখা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে বাংলা পড়ানোর নিয়ে এবং বাংলা মাধ্যমে পড়ানো নিয়েই অনেকে নাসিকা কুঞ্চিত করে থাকেন। তারা মূলত উপযোগিতার নিরিখে বাংলা বিভাগকে বিবেচনা করে থাকেন। তাদের দোষ দেওয়া যায় না; কারণ পেটে-ভাতে না চললে পৃথিবী গদ্যময় হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে ব্যক্তির টিকে থাকাই চরম সার্থকতা। অতএব যে বিষয় টিকে থাকতে সহায়তা করবে সে বিষয়ের দিকেই দৃষ্টি উচ্চকিত হবে।

নির্মম হলেও সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ জানে না শিক্ষার্থীরা কোন প্রসঙ্গ কেন শিখছে; তারা জানে না, বাংলা বিদ্যা পড়ে একজন শিক্ষার্থী পদ্ধতিগতভাবে ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক কোন ধরনের গুণ অর্জন করছে? সমালোচনাত্মক পাঠ, দাপ্তরিক ভাষাজ্ঞান, প্রায়োগিক ভাষাজ্ঞান শিখছে কি? বাংলার একজন শিক্ষার্থী কি বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লিখতে পারবে? লেখা সম্পাদনার কৌশল সম্পর্কে তাকে কি ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে? লেখার বিভিন্ন রীতি— বিশ্লেষণাত্মক, বর্ণনামূলক, তথ্যমূলক, সৃষ্টিশীল, দাপ্তরিক ইত্যাদি সম্পর্কে সে কি জানছে? একজন শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের কোনো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা দুপাতায় লিখতে পারবে? কীভাবে একটি প্রচারপত্র, পণ্যের বিবরণ কিংবা ইস্তেহার লিখতে হয়, সে কি জানে? একটি বই কীভাবে পড়া যায়, তার নিবিড় পরিচয় কি সে পেয়েছে? সাহিত্য ও সংস্কৃতির তত্ত্বদুনিয়ার খবর কি তাকে দেওয়া হয়? শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষাদানের রীতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কি তাকে দেওয়া হয়?

অভিজ্ঞতা বলে, অধিকাংশ উত্তর হবে না-সূচক। তাহলে এই বাংলা বিদ্যা নিয়ে আমরা কী করবো? বাঙালির আবেগ ধরে রেখে বাংলা ও বাঙালির সত্যিকার লাভ হচ্ছে না, বরং লোকসানের ভাঁড়ার উপচে উঠছে। কিছু দিনের জন্য চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদ, মঙ্গলকাব্য, পুঁথি সাহিত্য, কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের উদ্ধৃতি কণ্ঠস্থ করে এবং তার পুনরুৎপাদন করে আর যাই হোক সময়ের দাবি ও প্রয়োজন মিটবে না। বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষাদান বিষয়ক তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক তৎপরতা অনুপস্থিত। বাংলা বিষয়টি কেন, কীভাবে জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে কোনো গবেষণা সম্পাদিত হয়নি। অথচ বাংলার প্রয়োগ নেই কোথায়! নতুন প্রযুক্তির নেতৃত্বে তৈরি হওয়া নিউ মিডিয়ায় বাংলার প্রয়োজন তৈরি হয়েছে; প্রচুর সংখ্যক বাংলা কনটেন্টের চাহিদা দেখা দিয়েছে। বাংলা জানা ব্যক্তিরা এই চাহিদা পূরণে সক্ষম। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন গণমাধ্যম ও বাংলা ভাষার সম্পর্ক বিষয়ক পাঠ্যবস্তু নেই। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বাংলা শিখন ও শিক্ষাদান বিষয়ক পাঠ্যবস্তু যোগ করা হয়েছে একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে; যদিও তার প্রায়োগিক পরিচয় দেখা যায়নি গত দশ বছরেও।

তাহলে কী পড়ানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাংলা বিভাগে? সাধারণের ধারণা— সাহিত্য, বাংলা ভাষার নিয়ম, ব্যাকরণ ইত্যাদি পড়ানো হয়ে থাকে। কথা আংশিক সত্য; কারণ ভাষার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ ও ব্যাকরণ নিয়ে বাংলা বিভাগের আগ্রহ খুব কমই। মূলত সাহিত্যই বিভাগগুলোর অবলম্বন। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি পড়ানো হয় বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত সাহিত্য; তার সবই প্রায় এসেছে ইংরেজি সূত্রে। এর সঙ্গে আছে ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঠ্যবস্তু। এসবের অংশ হিসেবে আছে বাংলা ব্যাকরণ। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভৃতি জ্ঞানশাখার বিষয়বস্তু পাঠ্য করা হয়েছে। ভাষা ও সাহিত্য পাঠের জন্য সবগুলো জ্ঞানশাখা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভাষা ও সাহিত্য পাঠের মূল বিষয়গুলোই বাংলা বিভাগে উপেক্ষিত। তার একটি হলো সাহিত্য পাঠ ও বিশ্লেষণের রীতি-পদ্ধতি, সাহিত্যতত্ত্ব ও সমালোচনার রীতি। দু-একটি কোর্সের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো সমাপ্ত হয়। কিন্তু সাহিত্যের নিবিড় পাঠের লক্ষ্যে ক্রিটিক্যাল থিওরি বা তত্ত্বচিন্তার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের বাংলা বিভাগগুলোতে তত্ত্বকে ধরে নেওয়া হয় সাহিত্য বহির্ভূত বিষয়; ভাবা হয় এগুলো দর্শন ও রাজনীতি সংক্রান্ত আধেয়মাত্র, সাহিত্য পড়ার ক্ষেত্রে এগুলোর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে; তবে কখনোই বাড়তি মর্যাদা দিতে ইচ্ছুক নন প্রথাগত শিক্ষাবিদরা। তারা বরং আগ্রহী সাহিত্যের সমাজ বাস্তবতা, চরিত্র বিচার ও শিল্পমূল্য নিরূপণে। কেউ কেউ সাহিত্যকে ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ভাবতে ইচ্ছুক হলেও সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে ইতিহাসের সমঝোতা করেন।

সমাজ বাস্তবতা হয়ে উঠেছে তালিকাপ্রবণ। আর তাই চর্যাপদের সমাজ বাস্তবতা বলতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বুঝে থাকেন খাদ্যপানীয়, পোশাক, তৈজসপত্র, দৈনন্দিন জিনিসপত্রের তালিকা। কারণ বাস্তবতা নির্মাণ কৌশল, বাস্তবতার দার্শনিক দিক, সাহিত্যিক বাস্তবতা, সামাজিক বাস্তবতা, বাস্তবতার ধরনধারণ সম্পর্কে কোনো তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপিত হয় না তার কাছে। চরিত্র বিচার করতে গিয়ে অধিকাংশ বিশ্লেষক সাহিত্যের আধার ও চরিত্রের আন্তঃসম্পর্ক বিচার করতে ব্যর্থ হন। শিল্পমূল্য নিরূপণের বিষয়টি খুবই হাস্যকর পর্যায়ে চলে গেছে; প্রথাগত বিদ্বৎসমাজ মনে করেন উপমা, উৎপেক্ষা, চিত্রকল্প, শব্দ ও ভাষাবৈচিত্র্যের তালিকা প্রণয়ন করাই রচনার শিল্পমূল্য নির্ধারণ। প্রকৃতপক্ষে সাহিত্যের সত্যিকার আঙ্গিক পাঠের ধারণা বাংলাদেশে তৈরিই হয়নি।

সাহিত্য অধ্যয়নের ক্ষেত্রে আরও একটি শূন্যতা ব্যাপক ও বিস্তৃত। সেটি হচ্ছে বাংলা বিভাগের বিদ্যার্থীরা জানেন না বাংলা সাহিত্য অধ্যয়নের বিদ্যায়তনিক ইতিহাস। কবে, কখন, কোথায়, কেন, কীভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিদ্যা-শাখাটি তৈরি হলো? তার অস্পষ্ট রেখাও প্রায় দুষ্প্রাপ্য বাংলা বিষয়ক বিদ্বৎসমাজের আলাপ ও পর্যালোচনায়। সবচেয়ে দুঃখজনক অবস্থান তৈরি করেছে সাহিত্য পাঠের আধুনিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। অবশ্য এও মনে রাখা দরকার যে, সাহিত্য পড়ার বিদ্যায়তনিক নতুন আয়োজনের পেছনে আছে ঔপনিবেশিক ইতিহাস। আর তাই ঔপনিবেশিক আধুনিকতাকে বেদবাক্য বলে গৃহীত হয়েছে বাংলা বিষয়ক বিদ্যায়তনে।

বাংলাদেশে সাহিত্য পড়ানো হয়ে থাকে আধুনিকতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণে। যদিও সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু বাংলা বিভাগে উপনিবেশায়নের সমালোচনা করা হয়; এই সূত্রে আধুনিকতার সীমাবদ্ধতাও চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু মোটা দাগে পাঠদানের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটেনি। ভাষা ও ভূখণ্ডকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের আবেগ পাঠক্রমের বিউপনিবেশায়ন ঘটাতে সক্ষম হয়নি; বিদ্যায়তনিক বিদ্বৎসমাজ নামেননি বাঙালি ও বাংলার নন্দনতত্ত্বের খোঁজে; ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের কোন চাহিদাগুলো মেটানো যাবে, তার খোঁজ-খবরও নেওয়া হয়নি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে।

সমকালীন পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, বাংলা বিভাগের আমূল রূপান্তর জরুরি। সমাজ ও রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চাহিদা অনুযায়ী নতুন বিষয়বস্তু সংযোজন করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে রূপান্তর প্রক্রিয়া। সৃষ্টিশীল লিখন পদ্ধতি, শিক্ষাতত্ত্ব ও ভাষাশিক্ষা, সম্পাদনা ও প্রকাশনা বিষয়ক অধ্যয়ন, ভাষা-প্রযুক্তি অধ্যয়ন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের মতো বিদ্যাশাখার সঙ্গে ভাষা ও সাহিত্যের সম্পৃক্তি অত্যন্ত সময় সংগত। বাণিজ্যিক ও প্রাযুক্তিক কারণে প্রচুর ভিন্নভাষীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসছেন; ভিন্নভাষীদের বাংলা শেখানোর পদ্ধতিগত বিবেচনাগুলো সামনে রেখে প্রস্তুত হতে পারে বাংলা বিভাগের পাঠ্যক্রম। মনে রাখা জরুরি, পেশাগত প্রয়োজন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করার অর্থ সামাজিক ও রাষ্ট্রিক উপযোগিতায় পিছিয়ে পড়া। জাতীয় আবেগের বান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে পলি মাটি বয়ে এনেছিল তার পুনর্জাগরণ অসম্ভব যদি না বাংলা ভাষাকে সাম্প্রতিকতার সঙ্গে মেলাতে পারি।

লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago