এইখানে বহু শব, বহু মৃত
এইখানে বহু শব, বহু মৃত, মাটিতে লুকিয়ে
আছে স্থির উদাসীন; যেন তারা মৃত্যুকেই নিয়ে
কী নিঃশব্দে খেলা করে: স্বাধীনতা যেন প্রিয় খেলা!
মৃত্যু এক অদ্ভুত গহ্বর; কিন্তু সেও অবেলায়
বধ্যভূমি ফুঁড়ে উঠে কলজে ছিঁড়ে, অক্ষিগোলক-কে
খুবলে তুলে যখন উন্মত্ত নৃত্যে অন্তরীক্ষে, অক্ষে
বিষণ্ণতা ওড়ায়, তখন তাকে তীব্র ঘৃণ্য লাগে।
মানুষকে মান দেয় মৃত্যু; এ কী দুর্ভাগ্যের
দিন আজ; যারা ছিল নেই তারা; তাদের অস্থিতে
মেদ-মজ্জা-মাংস রক্তে সৃষ্টি হয় দেশ অস্বস্তিতে।
এ দেশ ফুলের; এর অন্তরাত্মাগুলো কঙ্কালের
গড়া ঘরে ছায়া পায়; ঘরে ফেরে বিধ্বস্ত স্বপ্নের
রঙে রক্তাপ্লুত হয়ে, ঘোরেফেরে অশরীরী হয়ে
খোঁজে তার হারানো শরীর, মুখ, দীপ্র অভয়ের
দিন, মাস, বছর, যুগান্ত; তারা ছিল বটে ওষ্ঠে
ওষ্ঠ ছোঁয়াবার দিনে নিজস্ব নারীর প্রকোষ্ঠের
তাপে, শিশুদের ঘ্রাণে, প্রিয় পুরুষের লোনা বক্ষে
স্পৃষ্ট হতে; কিন্তু তারা নেই আজ! হায়রে, দুঃখের
রোদে-ওড়া পতাকারা, রক্তে ডোবা যুদ্ধ, স্বাধীনতা,
ভালো থেকো— উজ্জ্বল মুকুট হয়ে মানুষ্য মাথায় থেকো।
তুমি প্রিয় দেশ, তুমি প্রিয় পুষ্ট বধ্যভূমি
যেখানে মানুষ তার আত্মদানে রক্তাক্ত উর্মির
দোলে নাচে, মাটিকে উর্বর করে শরীর বিলিয়ে,
এইখানে বহু শব, বহু মৃত, মাটিতে লুকিয়ে
আছে স্থির; সাইপ্রেসে ছাওয়া এই অটমের দিনে
আমাদের উৎসবের হলুদ বিলাপে, গানে, ঋণে
ঋজু করে তোলে এই স্বপ্নের বাড়িতে চিরকাল।
শহীদ! বাড়িতে যাচ্ছি, এ দেশ উৎসবে উন্মাতালে!
তোমাদের জন্য গড়ি সুআশ্রয়, হৃদয়কে খুঁদে
স্মরণ-ভাস্কর্য গড়ি, পতাকাকে সুরবুদ্বুদের
ভেতরে বাঙ্ময় করি; বারোকের কারুকার্যে ধরি;
তোমাদের রক্তে পলি, তোমাদের স্মৃতি ধন্বন্তরি!
তোমাদের মনে রাখি মৃতগণ, প্রিয় স্বজনেরা;
যারা ছিল নেই; কিন্তু চিরকাল সুঘ্রাণের ঘেরা
স্বপ্নের বাড়িতে, প্রান্তরে, দেশে, পতাকার রঙে
উৎসবে কি অনুৎসবে, কবিতায়, গানেদের অঙ্গে
তোমাদের পাবো খুবই: তোমাদের স্মৃতিগুলো খুবলে
এনে আলো দেব সূর্যকে, চন্দ্রকে — ভালোবাসা উগলে!
Comments