‘নিরাপত্তার অভাবে’ ম্রোদের ঐতিহ্যবাহী ‘চানক্রান পয়’ উৎসব হচ্ছে না

ম্রোদের ঐতিহ্যবাহী ‘চানক্রান পয়’ উৎসব। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার ফাইল ফটো

'বৈসাবি' নিছক একটি শব্দ বা বর্ণগুচ্ছ নয়, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রাণের উৎসব যা আমাদের দেশের ঐতিহ্য।

ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই, ম্রোদের চানক্রান, খিয়াংদের সাংগ্রান, খুমিদের সাংক্রাই, চাকমাদের বিজু এবং তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষুর আদ্যাক্ষর নিয়ে দাঁড়িয়েছে 'বৈসাবি'।

পাহাড়ের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীরা যখন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কেনাকাটা, খাবার তৈরি, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা এবং পাহাড়ের বাইরের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে আমন্ত্রণ জানাতে ব্যস্ত তখন ম্রো নৃগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যবাহী 'চানক্রান পয়' উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার ফাইল ফটো

বান্দরবানের থানচি উপজেলার বাসিন্দা লেং পাও ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি। গত ২ বছর করোনা মহামারির কারণে উৎসব করতে পারিনি। এ বছর অনেক আশা নিয়ে ছিলাম। উৎসব হবে না জেনে মন অনেক খারাপ হয়ে গেছে।'

শুধু লেং পাও ম্রো নন বান্দরবানের বসবাসরত ৬০ হাজারেরও বেশি ম্রো 'চানক্রান'র আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান ম্রো লেখক ইয়াংঙান ম্রো।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুইফু ম্রো পাড়াতে প্রতি বছর এপ্রিলের ১৪ তারিখে এই উৎসব হত। এ উপলক্ষে দুর্গম পাহাড় থেকে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন মেলায় আসতেন। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে উদযাপিত হয়ে আসা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত।'

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার ফাইল ফটো

তিনি আরও বলেন, 'বছরের এই একটা দিন আমাদের কাছে অনেক আনন্দের। এই মেলা আমাদের মিলন কেন্দ্র। নিরাপত্তার অভাবে মেলা না করার সিদ্ধান্ত অনেক কষ্টের।'

'যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিল না দুর্গম এলাকায় বসবাসরত ম্রোরা ২-৩ দিন পায়ে হেঁটে এই মেলায় আসতেন। এই মেলার মাধ্যমে অপরিচিতদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে পরিচিত হওয়া ছিল মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য,' যোগ করেন ইয়াংঙান।

'চানক্রান পয়' উৎসব কমিটির সদস্য মানরাও ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতি আগের মতো নেই। এখন সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। নিরাপত্তার অভাবে আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বছর সানক্রান পয় মেলা করবো না।'

ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/ স্টার ফাইল ফটো

কমিটির সাবেক সদস্য রিংয়ং ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত নিরাপত্তার অভাবে এ বছর আমরা মেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সীমিত আকারে অনুষ্ঠান করব।'

এই বিষয়ে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিরাপত্তার অভাবের কারণে ম্রোদের উৎসব না করার বিষয়টি এখনও কেউ আমাদের জানাননি।'

Comments

The Daily Star  | English

Managing expectations the challenge for EC

The EC was a rubber stamp to legalise AL's usurpation of power in last three elections

3h ago