‘ভাই দোয়া কইরেন’ ডেইলি স্টারকে ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি খালেদ
গভীর ঘুমে ছিলাম। আনুমানিক সময় ভোর ৫টা। হঠাৎ করে বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো বাড়ি। ধরফড় করে ঘুম থেকে উঠতেই শুনি আরো কয়েকদফা গোলা বা বোমার শব্দ। ঘরের জানালা দরজা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আমার বাসা থেকে বরিস পোল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মাত্র ৩০ কিলোমিটার। টিভি অন করতেই দেখলাম বিমানবন্দরের আশেপাশে বোমা বর্ষণ হয়েছে।
কোনো বিরতি ছাড়াই কথাগুলো বললেন, ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক খালেদ হাসান খান। তিনি ৩৮ বছর ধরে বসবাস করছেন ইউক্রেনে। বর্তমানে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বসবাস করছেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা খালেদ।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় বারবার লাইন কাটছিলেন। বাংলাদেশ থেকে তার আত্মীয় স্বজন উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন দিচ্ছিলেন।
এখনকার পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে বলেন, এখনো কোনো সাধারণ নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি তবে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সকালে প্রেসিডেন্ট মার্শাল ল জারি করেছেন। সমস্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনি বলেছেন, মানুষ যেনো আতঙ্কিত না হয়। ঘরের বাইরে যেনো না যায়। কিন্তু মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে রাস্তায় ভিড় করছে।
এরই মাঝে ২ বার ফোনের লাইন কাটেন খালেদ। তারমধ্যে একবার ছিল টেলিভিশনে খবর শোনার জন্য।
আপনি ইউক্রেন ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'আমি যাবো না। এই দেশে আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে আছি। দেশের জনগনকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ফেলে আমি যেতে পারি না। সবার যা হবে আমারো তাই হবে। সবাই মরলে আমিও মরবো।
এ সময় পাশ থেকে শোনা গেলো এক নারী কণ্ঠ। কী বললেন তা বোঝা গেলো না। খালেদ বললেন ভাই কথা সংক্ষিপ্ত করতে হবে কারণ সব গুছিয়ে নিচ্ছি। নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য মালামাল গোচ্ছাছি।
নিরাপদ অবস্থান কোথায়? খালেদ বললেন যে প্রতিটি এলাকায় কিছু নিরাপদে লুকানোর ব্যবস্থা আছে। আমরা সেখানেই যাবো।
অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে কি যোগাযোগ হয়েছে, তিনি বললেন কিয়েভে প্রায় ৫০০ বাঙ্গালি আছে। সবাই আতঙ্কিত কিন্তু যাওয়ার জায়গায়ও অধিকাংশের নেই। কারণ অনেকের বৈধ কাগজ নেই। অনেকেই শরনার্থী হিসেবে আছে এখানে।
ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে বললেন, 'ভাই দোয়া কইরেন।'
Comments