ইউক্রেনীয়দের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের কান্না

রোববার বিকেলে পোল্যান্ডের কাছে ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থান করছিলেন পলাশ আহমেদ। সে সময় হোয়াটসঅ্যাপে তাকে ফোন করলে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। '১৬ বছর ধরে ইউক্রেনে বাস করছি। আমি এই দেশটার প্রতি মায়ায় পরে গেছি ভাই,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

'আমিও অন্যদের মতো জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিয়েভ থেকে পোল্যান্ডের দিকে গাড়ি চালাতে শুরু করেছিলাম। এখন পোল্যান্ডের সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে আছি। কিন্তু এখন আর মন চাইছে না সীমান্ত অতিক্রম করি,' বলছিলেন তিনি।

শরীয়তপুরের পলাশ মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইউক্রেনে যান। তিনি জানান, প্রথমে সেখানে কাজ করতেন এবং পরে কিয়েভে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ইউক্রেনের নাগরিক।

তিনি বলেন, 'আমার পুরো যৌবন কেটেছে এই দেশে। আমি এখানকার মানুষের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছি। এই সংকটের সময়ে কীভাবে এই দেশ ছেড়ে যাই।'

কয়েক সপ্তাহ আগে তার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া হামলা শুরু করায় আর ফিরতে পারেননি। হামলা শুরুর পর হাজারো ইউক্রেনীয় এবং বিদেশিরা প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও মলদোভার দিকে যেতে বাধ্য হন।

ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তের রাস্তায় বিশাল যানজট তৈরি হয়েছে। অনেকেই গাড়ির জ্বালানি এবং খাদ্য সংকটে পড়েছেন।

পলাশ বলেন, 'রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা যানজটে আটকে পড়াদের রান্না করে খাইয়েছেন। ইউক্রেনীয়রা আসলেই অনেক ভালো।'

'আপনি আবেগঘন এসব দৃশ্য না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের গাড়ির চাবি দিয়ে দিচ্ছে এবং লড়াই করতে ফিরে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয়রা এখন ঐক্যবদ্ধ,' সম্ভবত যুদ্ধের এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে তার স্ত্রী ও ছেলের কথা মনে করে বলছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা মিত্ররা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া এবং এর ৩ দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরু করে। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে এবং ইউক্রেনের প্রদেশ ক্রিমিয়াকে নিজেদের অধীনে নেয়।

রাশিয়া চায় না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান মানে পরাশক্তি রাশিয়ার নিরাপত্তায় হুমকি, যদিও রাশিয়ার সামরিক শক্তির সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক শক্তির কোনো তুলনাই হয় না।

ন্যাটো ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত কোনো সেনা পাঠায়নি। তবে অস্ত্র পাঠিয়েছে। পলাশ জানান, অনেক সাধারণ ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে এবং অনেক জায়গায় রাশিয়ানদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইউক্রেনীয় এই লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে বলেও খবর পেয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ইউক্রেনীয়রা দেশরক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।'

আটকে পড়া বাংলাদেশিরা পোল্যান্ড দূতাবাসে যোগাযোগ করুন

ইতোমধ্যে ৪০০ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন এবং আরও কয়েকশ এখনো পৌঁছাতে পারেননি। ইউক্রেনে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশির বসবাস এবং তাদের মধ্যে অনেকে রয়ে গেছেন দেশটিতে।

রোববার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি নিরাপদে ইউক্রেন সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অস্থায়ী আশ্রয়ে আছেন। বাকিরা তাদের নিজ ব্যবস্থায় আছেন।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস ইউক্রেন রেড ক্রসের সহায়তায় ২৮ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার ও স্থানান্তরে কাজ করছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের আইওএমের সহযোগিতায় কারাগারে থাকা বা ইউক্রেনে আটক বাংলাদেশিদের সরিয়ে নিতে দূতাবাস কাজ করছে।

১৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাঙ্গেরিতে এবং ৭ জন রোমানিয়ায় প্রবেশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এক বিবৃতিতে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে যে তারা ইতোমধ্যে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করছে।

তাদেরকে পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর ও পূর্ণ ঠিকানা দূতাবাস কর্মকর্তা তৌহিদ ইমামের হোয়াটসঅ্যাপ +4915778676376 নম্বরে অথবা service.warsaw@mofa.gov.bd এ ইমেইল করে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া যারা ইউক্রেনে আটকা পড়েছেন, তাদের নাম, মোবাইল নম্বর ও পূর্ণ ঠিকানা একই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠাতে বলেছে দূতাবাস।

'আপনারা যেখানেই থাকুন দয়া করে পরিস্থিতি বিবেচনা করে রেড ক্রস (আইসিআরসি) আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, আপনাদের উদ্ধার করবে এবং সীমান্তে পৌঁছে দেবে,' বিবৃতিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাসের দুটি দল ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে কনস্যুলার সেবা দিতে কাজ করছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

17h ago