২ বছর পর চট্টগ্রামে আবারো জব্বারের ঐতিহাসিক বলিখেলা শুরু

ছবি: অরুণ বিকাশ দে

আব্দুল জব্বারের বলি খেলার (আবদুল জব্বারের কুস্তি প্রতিযোগিতা) ১১৩ তম আসর উপলক্ষে চট্টগ্রামে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে।

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘির পাড়ে এই মেলা শুরু হয়। মেলার মূল আকর্ষণ বলি খেলা (কুস্তি প্রতিযোগিতা) আজ সোমবার ৩টা থেকে শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা মেলা প্রাঙ্গণে তাদের পাসরা সাজিয়ে বসেছেন। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ এখন মুখরিত।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত দুই বছর মেলা ও বলি খেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সে কারণে এবার মেলা ঘিরে দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। এতে করে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ব্যাপক আশা সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপ উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা প্রধানত গৃহস্থালি সামগ্রী, হস্তশিল্প এবং খেলনা কিনতে লালদীঘি ময়দানের আশেপাশে প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত মেলায় ভিড় করছেন।

প্রতিবছর এখানে ভালো ব্যবসা হয় বলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সারা বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করেন।

চট্টগ্রাম নগরীর বদরপাতির ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি ময়দানে ১৩১৬ সনের ১২ বৈশাখ (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ) এই কুস্তি প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের শারীরিকভাবে ফিট করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এ মেলা গতকাল শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল পর্যন্ত।

দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা মূলত গৃহস্থালি ও রান্নাঘরের জিনিসপত্র, মৃৎপাত্র, খেলনা, মিষ্টি, ঝাড়ু, পাটি (মাদুর), আসবাবপত্র, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি শোপিস, বেতের জিনিসপত্র, গাছের চারা এবং মাছ ধরার জালসহ সব ধরনের হস্তশিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অস্থায়ী দোকানে।

মেলায় ঝাড়ু বিক্রি করছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ব্যবসায়ী রহিম মিয়া। তিনি একজোড়া ফুল-ঝাড়ু ১৬০ টাকা এবং লাঠি-ঝাড়ু ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

নারী দর্শনার্থীদের অতি আগ্রহ সহকারে তার দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে। নগরীর পাথরঘাটার বাসিন্দা পারভিন আক্তারকে ফুল-ঝাড়ু কিনতে দেখা গেছে। তিনি জানান, মেলা থেকে প্রতিবছর ঝাড়ু কেনেন।

তিনি বলেন, 'বাসার জন্য সারা বছরের ঝাড়ু এই মেলা থেকেই কিনি। গত দুই বছর মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছিলাম, তাই এইবার বেশি করে কিনে রাখছি।'

ফরিদপুরের ব্যবসায়ী কুদ্দুস শেখ কেসি দে সড়কে পাটি (মাদুর) বিক্রি করছিলেন। পাটি নির্মাতাদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন চুক্তিতে মেলায় পাটি বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। কুদ্দুস বলেন, বিক্রির হার অন্যান্য বারের তুলনায় কিছুটা মন্থর। মানভেদে তিনি এক একটি পাটি বিক্রি করছেন ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।

এদিকে হস্তশিল্প সামগ্রী কেনার জন্য ইসলাম সরকারের দোকানে লোকজনকে ভিড় করতে দেখা গেছে। ইসলাম সরকার এখানে কড়াই (ফ্রাই প্যান), কাঠের রোলিং বোর্ড, রোলিং লাঠি, জলচৌকি (কাঠের আসন), বটি, হাতুড়ি, যাঁতি, দা, পাটা (মশলা পিষণোর জন্য পাথরের স্ল্যাব) এবং হামামদিস্তার পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

নরসিংদী থেকে আসা ইসলাম সরকার জানান, তার দৈনিক বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই লাখ টাকা। তিনি তার পণ্য থেকে ২৫ শতাংশ লাভ করেন বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

12h ago