শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি

মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ ও তার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

গত বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে, যারা অসহিষ্ণুতা, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে বিতর্ক হয়। সেই স্বাভাবিক বিতর্ককে শিক্ষকের অজান্তে রেকর্ড করে ক্লাসের বাইরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় ক্লাসেরই শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক এ থেকে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়, শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তার জামিনও নামঞ্জুর হয়। ঘটনাটি আমাদের হতবাক করেছে এবং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।'  

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'আমরা শ্রেণিকক্ষের ওই কথোপকথনের লিখিত রূপ পড়েছি, এবং ওই আলাপচারিতাকে স্বাভাবিক এক বিতর্ক বলেই মনে করছি। শিক্ষকের দিক থেকে ধর্মীয় অবমাননার কোনো প্রয়াস তো ছিলই না, বরং যুক্তি দিয়ে, একাডেমিক ভঙ্গিতে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর ও ব্যাখ্যা করার একটি মনোভঙ্গি এতে স্পষ্ট ছিল। তার যুক্তি ও ব্যাখ্যার ধরন ও মান শিক্ষক। যদিও শিক্ষার্থীর দিক থেকে ছুঁড়ে দেয়া প্রশ্নগুলো উদ্দেশ্যমূলক ভাবার অবকাশ রয়েছে। বক্তব্য রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেয়া, মামলা হওয়া ইত্যাদির পরে এ ধারণাটি স্পষ্ট হয়।'   

'শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞানের চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ একজন এবং তার একান্ত সত্তাটি আপাদমস্তক শিক্ষকতারই সত্তা। কারণ যতটা ধৈর্য্য ধরে তিনি তার শিক্ষার্থীদের উস্কানিমূলক অযাচিত প্রশ্নের বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ ব্যতীত উত্তর করে গেছেন তা তার বিনয় ও জ্ঞানেরই বহিঃপ্রকাশ। এমন একজন শিক্ষককে যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা প্রয়োজন, সেখানে রাষ্ট্র তাকে কারাগারে বন্দি করেছে,' বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, বিজ্ঞানশিক্ষা আর ধর্মবিশ্বাসের এই দ্বৈরথ বহু পুরোনো এবং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই দ্বৈরথকে যে জাতি আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে যুক্তিকে সামনে রেখে এগিয়েছে, তারাই উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, এদেশের জন্য শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মতো শিক্ষকেরই আজ বেশি প্রয়োজন। শিক্ষক ও নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি শিক্ষকের কাজই হলো শিক্ষার্থীদের চিন্তা-জগতকে প্রসারিত করতে সাহায্য করা, তাদের মধ্যে জানার কৌতূহল সৃষ্টি করা, প্রশ্ন করার সাহস সঞ্চার করা ও অনুসন্ধিৎসু মন তৈরি করা। হৃদয় এই চেষ্টাই করেছেন। কারও দ্বিমত থাকলে তর্ক-বিতর্ক হবে, সহনশীলতাসহ যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্য দিয়ে জ্ঞানের জগৎ সম্প্রসারিত হবে। কিন্তু মতামতের জন্য জোরজুলুম হবে কেন? একদিকে এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর দাবির মুখে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, পাশাপাশি অন্য কেউ ঠিক করে দিতে চাচ্ছে ক্লাসে কী পড়ানো যাবে, কী যাবে না?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক থেকে সরকারের কাছে অবিলম্বে হৃদয় মণ্ডলকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাকে হেনস্থা করার জন্য দুঃখপ্রকাশের দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন, আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কামরুল হাসান মামুন,  অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আরাফাত রহমান, সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিম আরাফাত মানব, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, প্রভাষক; সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক; কাজলী সেহরীন ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক; শর্মি হোসেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি,  প্রভাষক; সুমন রহমান, ইউল্যাব মিডিয়া স্টাডিজ এন্ড জার্নালিজম, অধ্যাপক;প্রিয়াংকা কুন্ডু, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, প্রভাষক; জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  গোপালগঞ্জ, বাংলা বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক; শামীমা আক্তার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  গোপালগঞ্জ,  বাংলা বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক;সুকান্ত বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,  গোপালগঞ্জ ইংরেজি সহকারী অধ্যাপক; ড. বিজন মোহন চাকী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,  রসায়ন, সহযোগী অধ্যাপক; মো. সাদ্দাম হোসেন,  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রসায়ন, সহকারী অধ্যাপক; কাজী হুমায়ুন কবীর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন অধ্যয়ন, সহযোগী অধ্যাপক; খোর‌শেদ আলম,  ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যালয়, গণ‌যোগা‌যোগ ও সাংবা‌দিকতা, সহযোগী অধ্যাপক; শামস্ আরা খাঁন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মেসি, সহকারী অধ্যাপক; মোহাম্মদ আলমগীর, বাংলাদেশ আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি, প্রভাষক; গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, অধ্যাপক; কাবেরী গায়েন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, অধ্যাপক; মো. তানভীর আহসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি, সহযোগী অধ্যাপক; তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি, সহযোগী অধ্যাপক;মোর্ত্তূজা আহমেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায় প্রশাসন, সহযোগী অধ্যাপক;কাজী শুসমিন আফসানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,  নাট্যকলা বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক; কাজী মামুন হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সহযোগী অধ্যাপক;মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট,  সহযোগী অধ্যাপক; তাহমিনা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবস্থাপনা, সহযোগী অধ্যাপক; সুবর্ণা মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সহকারী অধ্যাপক; আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন অধ্যয়ন, সহযোগী অধ্যাপক; কামাল চৌধুরী,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,        ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি,  অধ্যাপক;আর রাজী,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সহকারী অধ্যাপক;মনিরা শরমিন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম যোগাযোগ, সহকারী অধ্যাপক; নাসির আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি, অধ্যাপক; সুস্মিতা চক্রবর্তী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ফোকলোর, অধ্যাপক; মিঞা মো. নওশাদ কবীর, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি ভাষা, সহযোগী অধ্যাপক; মাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক; সুদীপ্ত শর্মা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা,  সহকারী অধ্যাপক; আরিফুজ্জামান, বশেমুরবিপ্রবি, ইইই, সহকারি অধ্যাপক;মাহমুদা আকন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, দর্শন বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক; মোশরেকা অদিতি হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগ. সহকারি অধ্যাপক; শেহরীন আতাউর খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগ, সহকারি অধ্যাপক; ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,      নৃবিজ্ঞান বিভাগ, সহকারি অধ্যাপক; সৌভিক রেজা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ, অধ্যাপক; পারভীন জলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস বিভাগ, অধ্যাপক; মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সহকারি অধ্যাপক;রায়হান রাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, দর্শন বিভাগ, অধ্যাপক; তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রভাষক;তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নি, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগ, প্রভাষক;গৌতম রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, সহযোগী অধ্যাপক; ফারহা তানজীম তিতিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, অর্থনীতি বিভাগ, সহকারি অধ্যাপক; মো. সাজ্জাদ হোসেন জাহিদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া, ইংরেজি, সহযোগী অধ্যাপক; বিভূতি সরকার, বশেমুরবিপ্রবি, অর্থনীতি, সহকারি অধ্যাপক;কাজী রবিউল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান, সহযোগী অধ্যাপক; কাজী রবিউল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান, সহযোগী অধ্যাপক; খাদিজা মিতু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, অধ্যাপক; সাঈদ ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান, অধ্যাপক; খন্দকার আশরাফুল মুনিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনীতি, অধ্যাপক; রুশাদ ফরিদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনীতি, সহকারি অধ্যাপক; মেছবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার সায়েন্স, সহকারি অধ্যাপক; বর্ণনা ভৌমিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, প্রভাষক; জপতোষ মন্ডল, বশেমুরবিপ্রবি, ত ও ই কৌশল বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক; মাহমুদুল সুমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান, অধ্যাপক; স্বপন আদনান, SOAS, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, অধ্যাপক; আ-আল মামুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সহযোগী অধ্যাপক; স্বাধীন সেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, অধ্যাপক; নাসরিন খন্দকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, সহযোগী অধ্যাপক; মাসউদ ইমরান মান্নু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‍্যালয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, অধ্যাপক; মৌমিতা রায়,  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা, সহকারি অধ্যাপক; ফাহমিদুল হক, বার্ড কলেজ,  যুক্তরাষ্ট্র, এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিস, ভিজিটিং প্রফেসর।

Comments

The Daily Star  | English

3 die of dengue as daily hospitalisations hit record high this year

Nearly 500 patients admitted in 24 hours as total cases rise to 12,763

1h ago