ক্ষমতার বাইরে থাকলেই পতন হয় না: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। তারপর ক্ষমতায় এসেছিল তারা। সুতরাং ক্ষমতার বাইরে থাকলেই পতন হয় না। আমরা (বিএনপি) হচ্ছি উচ্চগামী ও ঊর্ধ্বগামী দল। তার প্রমাণ করার জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার, আর কিছু দরকার নেই আমাদের।'
তিনি বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের যে স্বভাবসুলভ চরিত্র, সবসময় তারা সন্ত্রাস করে ত্রাস করে ক্ষমতায় যায়। সেভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই অবস্থা তৈরি করে তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।'
আজ শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এবং দেশের ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। এমনকি পত্রিকার সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।'
'বিএনপি নির্বাচনে রিগিং করে ক্ষমতায় আসে' এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে মির্জা ফখরুল বলেন, '২০১৪ সালে জনগণকে ভোট দেওয়ার কোন সুযোগ দেয়নি আওয়ামী লীগ। ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিতদের নিয়ে তারা ক্ষমতায় গেছে।'
'একইভাবে ২০১৮ সালেও তারা সারাদেশে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে, নির্বাচন পূর্ব গায়েবী মামলা, অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা, ১৯ জন প্রার্থীকে বন্দি, আদালত, নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোটের আগের রাতেই নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগ তাদের পক্ষে নিয়ে চলে গেছে,' যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'এই যাদের ইতিহাস... সেটা শুধু আজকের নয়, ১৯৭৩ সালে যখন আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য ও জনপ্রিয়তা ছিল, তখনো কিন্তু নির্বাচনে তারা কাউকে ছাড় দেয়নি। এটা তাদের স্বভাব, এই স্বভাবের জন্য তারা জোর করে সবকিছুতে শক্তি ও বল প্রয়োগ করে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায়।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গত ১৪ বছরের ইতিহাসই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সেই ইতিহাস, তারা একে একে সবকিছুকে পরিবর্তন করেছে, সংবিধান পরিবর্তন করেছে। সংবিধানের যে মৌলিক ধারাগুলো ছিল সেগুলো পরিবর্তন করে এটাকে আওয়ামী সংবিধানে পরিবর্তন করেছে।'
তিনি বলেন, 'তিনটি অনুচ্ছেদ আছে যেখানে এখন সংশোধন করে যেটা নিয়ে এসেছে, এখন বলা হচ্ছে এটাতে কোনদিন হাত দেওয়া যাবে না, আজীবন থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এই সংবিধানের তিনটি অনুচ্ছেদে হাত দেওয়া যাবে না।'
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের যে মৌলিক চরিত্র সংবিধানের যে মৌলিক চরিত্র এটা একটা প্রজাতন্ত্র, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে সরকার, জনগণ এই সংবিধানের পরিবর্তনসহ সব কিছু করতে পারে। এই ক্ষমতাটাও তারা নিয়ে চলে গেছে।'
'৭৫ সালে আমরা সবাই জানি কোনো রেফারেন্ডাম ছাড়াই পার্লামেন্টে ৫ মিনিটের মধ্যে ক্যু করে একটা একদলীয় শাসন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল এই আওয়ামী লীগ,' বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সুতরাং এখন যখন তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি এবং আমাদের মতো অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এভাবে যখন কথা বলেন তখন এটা হাস্যকর পরিস্থিতিতে দাঁড়ায় এবং এটাকে প্রতারণা ছাড়া কিছু বলা যায় না।'
সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহবান জানিয়ে ফখরুল বলেন, 'এটিই এখন বাংলাদেশের একটি বড় সংকট, এ সংকট নিরসন করুন।'
এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নুরুজ্জামান নুরু, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments