দর্শনা-মেহেরপুর নতুন রেল সংযোগে ব্যয় ২ হাজার কোটি টাকা
দর্শনা থেকে মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ কিলোমিটার মূল লাইন ও ১০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা।
এই লাইনে স্টেশন থাকবে ৬টি। সেগুলো হলো—দর্শনা, বাস্তোপুর, কানাইডাঙ্গা, মুজিবনগর, মোনাখালি ও মেহেরপুর।
গত শনিবার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাজধানীর একটি হোটেলে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক আরিফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা শেষ করেছি। শিগগিরই আমরা একটি সম্পূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেবো বলে আশা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন লাইনটি নির্মাণে বিনিয়োগ প্রকল্প নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।'
২০১১ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেহেরপুরকে দর্শনার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও লাইনের বিস্তারিত নকশা তৈরির জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রকল্পটির সময়সীমা ২০২০ সালের আগস্টে থাকলেও ২০২০ সালের মার্চে কর্তৃপক্ষ এই কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের একটি কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রতিনিধিরা কিছু বিষয়ে মতবিরোধ করায় লাইনটির অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করতে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ সময় লেগেছে।
এ ছাড়া, মহামারির কারণে প্রস্তুতিমূলক কাজেও দেরি হয়েছে।
প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের জুনে।
দর্শনা-মেহেরপুর রেল সংযোগ
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেখা গেছে, সর্বমোট ৫৬ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করতে হবে। যার মধ্যে সাড়ে ৩৪ কিলোমিটার প্রধান লাইন, ১০ কিলোমিটার লুপ লাইন ও সাড়ে ৩ কিলোমিটার হবে সাইড লাইন।
এ ছাড়াও, বিদ্যমান ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার লাইনও পুনর্নির্মাণ করতে হবে।
পুরো লাইনে থাকবে ৩টি প্রধান সেতু। সেগুলো হলো—মাথাভাঙ্গা নদীর ওপরে একটি এবং ভৈরব নদীর উপরে দুটি। একইসঙ্গে লাইনে ৬৩টি কালভার্টও নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৪২১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেললাইনটি নির্মাণের জন্য অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো দেশ এই প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
সেক্ষেত্রে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই রেললাইন তৈরি করতে পারে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও ধরেননি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক। এরপর ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে প্রথম বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে শপথ নিয়েছিল। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই মুজিবনগর গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
Comments