মাঝরাতে ফের জমে উঠেছে রাজধানীর গরুর হাট

ছবি: স্টার

ঈদের আগের দিন বিকেলে রাজধানীর হাটগুলোতে চড়া দামে গরু বিক্রির খবর শুনে আশেপাশের জেলাগুলো থেকে গরু আসতে শুরু করে। পরে রাত ৯টার দিকে ক্রেতাদের চেয়ে গরুর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে শেয়ারবাজারের মতো পড়তে শুরু করে গরুর দাম।

শনিবার রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখা যায়, যেসব গরু সারাদিন ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল, রাত ৯টার পর সেসব গরুর দাম দাঁড়ায় ৮০-৯০ হাজার টাকায়। 

কয়েকদিন ধরে রাজধানীর শারুলিয়া, মেরাদিয়া, গাবতলী ও আফতাব নগরের গরুর হাটে গরু কেনার জন্য ঘুরেছেন মো. শহীদুল্লাহ। দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারেননি। অবশেষে শনিবার রাতে তিনি ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় পছন্দমতো একটি গরু কিনেছেন। 

তার দাবি, গরুটির পৌনে ৪ মণ মাংস হবে। দিনের বেলা গরুটির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও ব্যাপারী সেটা বিক্রি করেননি। পরে রাতে বাধ্য হয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মো. শহীদুল্লাহর মতো আরও অনেকে রাত ১২টার পরে নেমেছেন গরুর হাটে। 

রাত ১১টার পর থেকে আবারও জমে উঠতে শুরু করে ডেমরার শারুলিয়া গরুর হাট। বিকেলের দিকে দাম বেশি থাকলেও রাতে কমতে শুরু করে। 

গাবতলী গরুর হাট থেকে একজন ক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, রাতে তিনি ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে যে গরুটি কিনেছেন, সেটা প্রায় পৌনে ২ মণ মাংস হবে। বিকেলে গরুটির দাম ৫৩ হাজার টাকা উঠেছিল।

রাজধানীর কচুক্ষেত গরুর হাটে রাত ১২টার দিকে বিক্রির অপেক্ষায় ছিল প্রায় ৪০০ গরু। ক্রেতা ছিল ৪০-৫০ জনের মতো। 

৯০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে ফিরছিলেন শ্যাওড়াপাড়ার একজন ক্রেতা। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এ ধরনের গরু বিকেলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

গরুর ব্যাপারী তৌহিদ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শুক্রবার ১৭টি গরু এনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করে গ্রামে চলে যান। শনিবার বিকেলে একজন তাকে ফোনে জানান, বাজারে গরুর দাম চড়া। খবর শুনে তখন তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে ৮টা গরু নিয়ে রওনা দিয়ে রাত ১১টার দিকে হাটে পৌছান। এসে দেখেন গরুর দাম অনেক কম। পরে ফোনে সংবাদদাতাকে বকাঝকা করে কেনা দামে দুটি গরু বিক্রি করেন। বাকি ৬টি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন অন্তত ৫-৬ হাজার টাকা করে লোকসান হলেও বিক্রি করবেন।

ঈদের আগের রাতে গরু কেনেন তারা

রাজধানীর বেশ কয়েকটি গরুর হাট ঘুরে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তারা প্রতিবছর শেষ রাতে গরু কেনেন। 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে সস্তায় গরু কেনা। প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি এভাবেই কম দামে কোরবানির গরু কেনেন। তার মধ্যে মাত্র দুবার তিনি বেশি দামে কিনেছেন। 

তারা মূল রাত ১০টার পর থেকে বাজারের উদ্দেশে বের হন সস্তায় গরু কিনতে। 

গাবতলী হাটের একজন ক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গাবতলী বাজারে রাত ১২টার পর থেকে আবার কিছুটা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ব্যাপারীরা কিছুটা লোকসানে বিক্রি করছে শুনে অনেক ক্রেতাও নতুন করে বাজারে গেছেন। 

তবে গাবতলী হাটে ছোট গরুর চেয়ে অবিক্রিত বড় গরুর সংখ্যা বেশি রয়েছে। 

এ হাটের ব্যাপারীরা জানান, ৫-১০ হাজার টাকা লোকসানে হলেও বিক্রি করলেন। তার বেশি লোকসানের সম্ভাবনা থাকলে বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। 

অবস্থার সুযোগ নিচ্ছেন ক্রেতারাও

কয়েকটি গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেশি দামের আশায় ব্যাপারীরা যেসব গরু বিক্রি না করে রেখে দিয়েছিলেন, রাতে ক্রেতারা সেসব গরুর এক তৃতীয়াংশ দাম হাঁকছেন। 

গাবতলী হাটে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুর অনেকে ৪০-৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন। তাদের যুক্তি এতে যদি বিক্রি করেন তো কিনবেন। না দিলে তো আর কিনতে পারবেন না। এ ধরনের দাম শুনে ক্ষেপেও যাচ্ছেন অনেক বিক্রেতা। 

 

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

22h ago