ভবদহের জলাবদ্ধতায় বিচ্ছিন্ন গ্রাম ‘বেদভিটা’

ছবি: সংগৃহীত

গ্রামের চারদিকে শত শত বিঘা মাছের ঘের। যতদূর দেখা যায় শুধু পানি আর পানি। যে পানির অপর নাম জীবন—সেটাই দুর্বিসহ করেছে এখানকার মানুষের জীবন। সারা বছর পানি থাকায় গ্রামের সব শিশু স্কুলেও যেতে পারে না।

বেদভিটা নামের এই গ্রামটির অবস্থান যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নে। আঞ্চলিক বাণিজ্যকেন্দ্র নওয়াপাড়া থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান।

ভবদহ বিলের জলাবদ্ধতায় এই গ্রামের বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। পানির কারণে এই গ্রামে কেউ মারা গেলে স্বাভাবিকভাবে দাফন করা যায় না। দূর থেকে গ্রামটিকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনে হয়।

বেদভিটা গ্রামে প্রায় সাত শ মানুষের বসবাস। তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তালের ডোঙ্গা বা ডিঙ্গি নৌকা।

গ্রামবাসী জানান, গ্রামটিতে এখন পর্যন্ত সভ্যতার ন্যূনতম ছোঁয়া লাগেনি। এর মধ্যেও কেউ কেউ সংগ্রাম করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। কয়েকজন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়েছেন। তবে এই সংখ্যা নগণ্য।

বেদভিটা গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল আছে। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটিও প্রায় সারা বছর তলিয়ে থাকে। ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে ভয়ে থাকেন অভিভাবক।

ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এ গ্রামের মানুষকে পাশের গ্রাম আন্ধা ও চলিশিয়া পার হয়ে যেতে হয় চলিশিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় নৌকায় অথবা বাঁশের সাঁকো ধরে ধরে। এই পথ যেতেই সময় লাগে দুই ঘণ্টা। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন মুমূর্ষু রোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা।

গ্রামের বাসিন্দা রহিমা মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কারও স্বজন মারা গেলে পড়তে হয় মহা বিপাকে। পানির কারণে দাফন করা কঠিন হয়ে পড়ে। হিন্দুদের মরদেহ সৎকারের করতে যেতে হয় পাঁচ কিলোমিটার দূরে নওয়াপাড়া মহাশ্মশানে। ডিঙি নৌকায় মরদেহ পরিবহনেও সমস্যার শেষ নেই। এর জন্য ঘের মালিকদের অনুমতি নিতে হয়।

বেদভিটা গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল খান (৫২) প্রতিদিন চার-পাঁচ কেজি মাছ কিনে নৌকায় করে যান নওয়াপাড়া বাজারে। মাছ বিক্রি করে সামান্য যা লাভ হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। তার তিন ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করছে।

সুকেশ মল্লিক নামে আরেকজন বাসিন্দা বললেন, পশু-পাখিরাও আমাদের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করে। রাতে খাটের ওপর মানুষ গৃহপালিত পশুপাখি একসঙ্গে থাকতে হয়।

সদ্য নির্বাচিত ইউপি মেম্বর মানিক বিশ্বাস বলেন, একজন সামান্য ইউপি সদস্যে হিসেবে কতটুকুই বা করার আছে। গ্রামের চারদিকে থৈ থৈ পানি। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পানি।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন জানান, ভবদহে জলাবদ্ধতার কারণে গ্রামটির এই অবস্থা। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য নতুন একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। গ্রামের চারপাশ থেকে পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago