অর্থনীতিবিদদের চোখে ইভ্যালির ‘ব্যবসা নীতি কৌশল’

(উপরের সারিতে বাম থেকে) ড. আহসান এইচ মনসুর ও অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, (নিচের সারিতে বাম থেকে) ড. সেলিম রায়হান ও ড. হেলাল উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

ইভ্যালির শুরু থেকেই ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল অগ্রিম টাকা পরিশোধের পরও সময়মত হাতে এসে পৌঁছাচ্ছে না অর্ডার করা পণ্য। এরপর পণ্যই পৌঁছাচ্ছে না গ্রাহকের হাতে। সম্প্রতি এই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও কিছু অভিযোগ। যেমন: ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (মার্চেন্ট) কেউ কেউ গ্রাহকদের পণ্য দিচ্ছে না। টাকা পাচ্ছে না বলে পণ্য সরবরাহকারীদের কেউ কেউ ইভ্যালির দেওয়া গিফট ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তার কারণ, ভাউচারের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের পাওনা পরিশোধ করেনি। আবার চেক দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকায় সেই চেক ব্যাংকে জমা দিতে নিষেধ করছে ইভ্যালি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালির নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি দুদকের অনুসন্ধানে। এই অর্থ আত্মসাৎ বা অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া, অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ইভ্যালির চলতি সম্পদ পাওয়া যায় প্রায় ৬৫ দশমিক ১৮ কোটি টাকা এবং সংস্থাটির মোট দায় প্রায় ৪০৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে, ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে প্রায় ২১৪ কোটি টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে দুদক জানায়, ইভ্যালির চলতি সম্পদ দিয়ে চলতি দায়ের বিপরীতে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

ইভ্যালি যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, সেটা কতটা নীতিসম্মত ও গ্রহণযোগ্য এবং ইভ্যালির বাণিজ্য নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিকস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সিরডাপের পরিচালক (গবেষণা) ড. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে প্রথম দিকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যাপক লোকসান করতে। এরপর বিক্রি বাড়িয়ে ভালো রকমের ব্যবসা করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। অ্যামাজন এই ধরনের বিজনেস মডেল ফলো করে। কিন্তু তারা চায় গ্রাহকরা যেন তাদের ওপর সন্তুষ্ট থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের লোকসানের ইচ্ছা থাকলে তাদের পুনরায় বিনিয়োগ করার মতো প্রচুর অর্থের যোগান থাকতে হয়।'

'তবে, ইভ্যালি যে প্রবণতা নিয়ে এগিয়েছে, তা হলো- মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজব, আবার কিছু তেল সেখান থেকে সরিয়েও ফেলব। এই ধরনের ব্যবসা শেষ পর্যন্ত টেকে না। আমরা এটাও দেখছি, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই ইভ্যালির মডেল ফলো করে প্রচুর ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। যে পরিমাণ ডিসকাউন্ট চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। শেষ পর্যন্ত এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ অবস্থায় পৌঁছায়।'

'ইভ্যালির ক্ষেত্রে এখন যেটা হচ্ছে, দেশি কোম্পানিগুলো একে একে তাদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। এর ফলে তারা মূলধন সংকটে পড়েছে। তারা প্রোডাক্ট মজুদ না রেখে অর্ডার নিয়েছে। এখন পর্যন্ত অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মূলধন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।'

'এখন ইভ্যালি যদি অ্যামাজন বা এরকম বড় কোনো প্রতিষ্ঠানকে তাদের পার্টনার হিসেবে আনতে পারে, যাদের কাছে চার-পাঁচশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা কোনো ব্যাপারই না। তা হলে তারা এই অবস্থা থেকে বের হতে পারবে। কিন্তু বড় মাপের কোনো বিদেশি কোম্পানির ইনভেস্ট পাওয়ার মতো রেপুটেশন ইভ্যালির নেই।'

'লোকসান করলেই কোনো বিজনেস মডেল খারাপ হয়ে যায় না। কিন্তু কেউ যদি লোকসানও করে, কাস্টমারদের খেপিয়ে তোলে। আবারও ইনভেস্ট করার মতো কোনো টাকাও না থাকে, তাহলে সেটা কোনো স্থায়ী ব্যবসা হতে পারে না।'

'এই ধরনের ব্যবসার কারণে গ্রাহক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসলে সঙ্গে সঙ্গে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দেরিতে হলেও ইভ্যালিকে কিছুটা নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে।'

'তবে, সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা হয়েছে, তা হলো- ইকমার্সের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট। এরপর থেকে দেশি কোনো প্রতিষ্ঠানকে জনগণ বিশ্বাস করবে না। এই সুযোগে বিদেশি কোম্পানি এসে নিয়ম মেনে ব্যবসা করবে এবং তাদের দাপটে দেশে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান আর দাঁড়াতেই পারবে না।'

অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, 'মানুষ নানাভাবে ব্যবসা করবে। প্রতিষ্ঠান যদি নিবন্ধিত হয়, তাহলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে কিছু দায়-দায়িত্ব নেবে। ইভ্যালি নিবন্ধিত কি না, সেটা আমি জানি না। যদি নিবন্ধিত হয়, তাহলে নীতি বহির্ভূত কিছু করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া, ভোক্তা অধিকার আইন আছে। যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সে বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।'

'ইভ্যালি মূলত কৈ-এর তেলে কৈ ভাজছে। মানুষের টাকা নিয়ে তারা ব্যবসা করছে। ইভ্যালির বিজনেস মডেল নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। তারপরও দেখেছি, তারা ব্যবসা করে যাচ্ছে, প্রচুর বিজ্ঞাপনও দিয়েছে। তবে, অগ্রিম নিয়ে, ডিসকাউন্ট দিয়েও ব্যবসা করা যায়। এটা বৈধ ব্যবসারই অংশ। একটার সঙ্গে একটা ফ্রি, সেটাও অসম্ভব কিছু না। এটাও বাজারে দেখা যাচ্ছে। বিজনেস মডেল হিসেবে এটাকে আমি না করব না। এই ধরনের বিজনেস মডেল বন্ধ করলে আমাদের অনেক ব্যবসা আটকে থাকবে। কিন্তু অর্ডার নেওয়ার পর সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা হলে সেটা স্রেফ প্রতারণা। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করলে সরকার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।'

'ব্যবসা-বাণিজ্যের শুরুতে বিধিনিষেধ আরোপ করার চেয়ে, যাতে কোনো কোম্পানি গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তাহলে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিন্তা করবে, তাদের তো পালিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।'

'তাছাড়া, ব্যবসায় অনেক ধরনের ফাঁক-ফোকর থাকে। সবসময় সবগুলো ধরাও পড়ে না। তাই যখনই ধরা পড়বে, তখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি, সরকারের কঠোর রেগুলেশনের চেয়ে বলা উচিত, অনিয়ম হলে আমি তোমাকে ছাড়ব না।'

'ইভ্যালির মতো ঘটনায় সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার জায়গা হলো, যখন দু-একটি প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায়, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে একশ জন, এক হাজার জন জড়ো হলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। অসংখ্য অভিযোগের পাহাড় না জমিয়ে, কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিতে হবে।'

ড. সেলিম রায়হান বলেন, 'ইভ্যালির বিজনেস মডেলটা যে কী, সেটা পরিষ্কার নয়। এরকম একটা বিজনেস মডেল স্যাসটেইনেবল হতে পারে কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেটা দেখছি, তা হলো- ইভ্যালি নিজস্ব সঞ্চিত মূলধনের চেয়েও বেশ কয়েকগুণ বেশি বিজনেস এক্সপানশনে গেছে। এজন্য তারা অন্যদের কাছ থেকে ধার করেছে, কাস্টমারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছে, সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে পণ্য নিয়েছে। এখন এই অর্থ কীভাবে ফেরত দেবে, তার কোনো মেকানিজম ইভ্যালির কাছে নেই। আমি এই ধরনের বিজনেস মডেল কোথাও দেখিনি। দেশের বাইরেও কোথাও না।'

'সবচেয়ে বড় কথা, ইভ্যালির বিরুদ্ধে এখন যে অ্যাকশনগুলো নেওয়া হচ্ছে, এতদিন ধরে তারা যে কাজগুলো করল, সেখানে যে রেগুলেটরি অথরিটিগুলো ছিল তারা কী করেছে? তারা কেন এগুলো ঠিক করেনি? অথবা শুরুতে যখন এই ধরনের একটি ই-কমার্সের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। তারা যে ধরনের বিজনেস মডেল সাবমিট করেছিল, সেটার ওপর ভিত্তি করেই তো লাইসেন্স দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা যে প্রাকটিস করছে, সেখানে এখন বড় ধরনের অনিয়ম আমরা দেখতে পাচ্ছি। এগুলো তদারকির দায়িত্ব যাদের, তারা কোথায় ছিল?'

'এরকম কেস আমরা আগেও দেখেছি। টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ থেকে চলে গেছে। গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাননি। আমি মনে করি, এটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, সরকারের ব্যর্থতা। এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। এবার সেটা অনেক বড় স্কেলে হলো। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে অপরাধীরা দেশত্যাগের পর খোঁজ পাওয়া যায়, তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এটা কমন স্টোরি। এবার হয়তো এখনো তারা পুরোপুরি সফল হয়নি।'

'যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লাইসেন্স দেয়, তাহলে তারা কী চেক করেছিল? লাইসেন্স পাওয়ার পর ইভ্যালি যেটা শুরু করল, সেগুলোও সব প্রকাশ্যে ছিল। তারা পত্র-পত্রিকায়, টিভিতে প্রচুর বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বড় বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ইউজ করেছে।'এই ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাছাড়া, এ দেশে ই-কমার্সের অভিজ্ঞতাও নতুন। গ্রাহকদের থেকে আমি সাপ্লায়ারদের বেশি দোষ দেব। তাদের তো সচেতনতার ঘাটতি থাকার কথা না। আমার মনে হয়, তারা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এই ধরনের কাজ করেছে। গ্রাহকদের মধ্যেও একই ধরনের বিষয় কাজ করেছে। তবে, এই ধরনের ঘটনায় তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করতে হবে।'

'দেশে বহু সংখ্যক কনজিউমার আছেন। অনেক সময় তারা গণ-প্রবণতা দ্বারা পরিচালিত হন। একজন অন্যজনের দ্বারা প্ররোচিত হন। প্রতারণার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো এই সুযোগগুলোই নেয়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। খুব একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হলো। এখন দেখতে হবে, কীরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কী রকমের রেগুলেটরি ইস্যু সামনে আনা হয়।'

'তবে, ইভ্যালির যে ১৬ শতাংশ সম্পত্তি আছে, তা দিয়ে বাকি প্রায় ৮৪ ভাগ দায় মেটানোর ক্ষমতা নেই। এদের যদি সম্পত্তি ক্রোকও করা হয়, তাহলে সেটা দিয়ে এই ঋণ মেটানো সম্ভব নয়। এটাকে প্রতারণা ছাড়া আমি কিছু বলব না। সহজ ভাষায় এটা প্রতারণা, দুর্নীতি।'

অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ইভ্যালির কর্মকাণ্ডকে কীভাবে ব্যবসা বলব, সেটা বুঝতে পারছি না। করপোরেট সেক্টরে এক ধরনের কৌশলগত প্রতিযোগিতা চলে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে একজন সরবরাহকারী যদি মনে করে অন্য সরবরাহকারীদের বাজার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পারব, প্রতিযোগীকে তখন বের করে দেওয়ার জন্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূলে পণ্য বিক্রি শুরু করে। পরে একপর্যায়ে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়েও নেয়। কিন্তু নিজে উৎপাদন না করে অন্যজনের কাছে থেকে অর্ডার নিয়ে কম দামে বিক্রি, এটা কোনো বিজনেস মডেল হতে পারে না। তাছাড়া, ইভ্যালির চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি ব্যবসায় এত টাকা ইনভেস্ট করেছেন। এখানে তার নিজের ইনভেস্ট কোথায়?'

'পুঁজি বিনিয়োগ না করে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো যায় না। বিষয়টা হলো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দু-একশ কোটি টাকার পণ্য নিয়েছে। এরপর পণ্য দেব বলে জনগণের কাছ থেকে আরও দু-একশ কোটি টাকা নিয়েছে। এটা বিনিয়োগ করা কোনো মূলধন না। এটা হলো ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়ার মাঝখানে যে লাভটুকু সেটা তার অংশ। সেটা ইনভেস্ট হয় কীভাবে? এই লাভের টাকা থেকে সে বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ করতে পারে। ইনভেস্ট বলে কীভাবে?'

'শুরু থেকেই ফ্রড ব্যবসা করেছে ইভ্যালি। তারা একটা পণ্যের উৎপাদনের চেয়ে কমমূল্যে বিক্রি করে কীভাবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যাদের অনেক টাকা ইনভেস্ট করার ক্ষমতা আছে, তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে প্রতিযোগী কোম্পানিকে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য এটা করতে পারে। ইভ্যালি এটা করে কীভাবে? এই ধরনের ব্যবসার পরিণতি আমরা দেখতেই পাচ্ছি। সে নিজে ধসে গেল, কিছু টাকা পয়সা সরিয়ে নিলো। যারা টাকা দিলো তারা ধরা খেল। এখন ইভ্যালির কারণে ই-কমার্সের সৎ ব্যবসায়ীরা কলঙ্কিত হয়ে গেল। মানুষ তাদেরকেও সন্দেহ করবে।'

'আমার প্রশ্ন হলো, এতদিন তারা কীভাবে এটা করল? ইভ্যালির এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা সরকারের। কোনো একটা ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কিছু নিয়মনীতি থাকে। যতক্ষণ না একটা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক দাঁড়াচ্ছে, তার আগে সরকারের উচিত না কাউকে এরকম নির্বিচারে ব্যবসা করতে দেওয়া। ন্যূনতম কোনো একটা নিয়মের আওতায় ব্যবসা করতে দেওয়া উচিত। যার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। এতদিন ধরে মার্কেট থেকে এত টাকা সংগ্রহ করেছে, অথচ কোথায় কোনো বাধার মুখে পড়েনি। এটা অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা।'

'এসব ঘটনায় শুধু শাস্তি দিলেই হবে না। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে কে? যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া, ক্রেতাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago