বাংলাদেশকে নতুন আলোয় দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

কেলি কেইডারলিং। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ সম্পর্কে পুরনো ধারণা থেকে সরে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে তারা আগামী ৫০ বছরে এই ২ দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুনভাবে চিত্রায়ন করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রদূত কেলি কেইডারলিং বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ একটি পোশাক প্রস্ততকারক এবং দরিদ্র স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে, এগিয়ে চলা অর্থনীতি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বিশ্ব নিরাপত্তায় অন্যতম অবদান রাখায় বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা বদলেছে।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ভারত মহাসাগরকেন্দ্রীক মানব ও মাদক পাচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আন্তজাতিক অপরাধের ওপরও নজর রাখে। এগুলোও বৈশ্বিক নিরাপত্তার বিষয়।'

জন কূটনীতি এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া (বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা) বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি কেইডারলিং জানান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সাইবার বিশ্বে সফটওয়্যার সরবরাহ করছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গত বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কেইডারলিং বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।'

বাংলাদেশে ৩ দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। এই সময়ে তিনি ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। এ ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনি জানান, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার বাকী ৫টি দেশ থেকে ভারতকে আলাদা করতে বাইডেন প্রশাসন স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমলাতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাকী দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের তত্ত্বাবধানে আপনাদের (বাংলাদেশের) অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা চাই। কারণ আমরা চাই না, ভারতের সঙ্গে থাকা গভীর সম্পর্কের কারণে এই ৫টি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ুক।'

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ থাকতে চায় এবং একবিংশ শতাব্দীতে কোনো দেশই অন্যান্য দেশকে নিরাপদ না করে নিজ দেশকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করতে চায় বলেও যোগ করেন তিনি।

আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সাম্প্রতিক সুরক্ষা চুক্তি (এইউকেইউএস) সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে করা হয়েছিল।

তিনি যোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সামুদ্রিক এলাকায় টহল দেওয়ার ও অবৈধ জাহাজ আটক করার সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে। কারণ এসব জাহাজের মাধ্যমে মানুষ, অস্ত্র ও মাদকসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন করা হতে পারে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি বিশাল জনসংখ্যার দেশ এবং উদীয়মান বাজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখান থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি করছে এবং এখানে রপ্তানি ও বিনিয়োগ করতে চায়।

'মার্কিন কোম্পানিগুলো এখানে রপ্তানি বা বিনিয়োগ করতে পারে। ড্রেজিং কোম্পানিগুলো এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। শুধু পোশাক খাতে নয়, এর বাইরেও বিনিয়োগ হতে পারে।'

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমতা ও শ্রম অধিকারের বিষয়েও আলোচনা করেন কেইডারলিং।

তিনি বলেন, আমেরিকানরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, যা মৌলিক মূল্যবোধ।

'মূল কথা হলো, আমরা শুধু ব্যবসা করতে এবং অর্থ উপার্জন করতে চাই না। আমেরিকান কূটনীতি গণতন্ত্র রক্ষা ও অগ্রসর করতে চায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago