বরিশালের নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য
বরিশাল অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বরিশাল, ভোলা, বরগুনা জেলার মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে অন্যান্য বছরের শীত মৌসুমের তুলনায় এবার আশাতীত মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
সোমবার বরিশালের সবচেয়ে বড় ইলিশ মাছের আড়ত পোর্ট রোডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ৪০০-৫০০ মণ ইলিশ মাছ বাজারে এসেছে। তবে বড় ইলিশ মাছের সঙ্গে ছোট আকারের জাটকাও ছিল সেখানে।
বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্রের পাইকারি ইলিশ ব্যবসায়ী ফজলু গাজী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শীতের মৌসুমে আশাতীত মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
জেলেরা জানান, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও, করোনার প্রভাবে তারা বেশ কিছু সময় মাছের তেমন দাম পাননি। তবে শীতে ইলিশের প্রাচুর্য থাকায় তাদের এই সংকট কেটে যাবে বলে জেলেরা মনে করছেন।
ভোলা সদরের জেলে আলাউদ্দিন মাঝি ডেইলি স্টারকে জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি গত ৭ দিনে অন্তত ২০০ মণ মাছ পেয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগের মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, ইলিশা, তেঁতুলিয়া, বিষখালীসহ বড় নদীগুলোতে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ পড়ছে। গত কয়েক বছরে এই পরিমাণ মাছ দেখা যায়নি।
ইলিশ গবেষক ও চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. অনিসুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, প্রাকৃতিকভাবেই ৪-৫ বছর পরপর মাছের উৎপাদন বেশি হয়। তবে আগের মাছের ব্যবস্থাপনা কম থাকলেও, গত ৫ বছরে অভয়াশ্রম তৈরি, জাটকা সুরক্ষাসহ সফল ব্যবস্থাপনা নদীতে সুষম অবস্থা তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, 'এখন বড়, মাঝারি ও ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে অর্থাৎ ইউনিফর্মিটি এসেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়া সমুদ্রে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মৎস্য জীবনচক্রে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এতে মাছ যেমন অধিকহারে ডিম ছাড়তে পারছে, তেমনি জাটকা সুরক্ষার কারণে সমুদ্রসীমায় ফিরে গিয়ে আবার নদীতে ফিরতে পারছে।'
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীতে মাছ থাকায় জেলেরা রাতে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরছে। বিস্তৃত মোহনা ও বড় নদীতে সুরক্ষা দিতে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় জেলেরা এটা করতে পারছে।'
এ বছর সারাদেশে ইলিশ উৎপাদনের টার্গেট ৬ লাখ টন এবং এর মধ্যে ৪ লাখ টন বরিশাল থেকেই আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
গত ৩ মাসে বরিশাল বিভাগে ১০০ টনেরও বেশি জাটকা আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
Comments