বন্যায় বদলে গেছে তাদের পেশা

হাকালুকি হাওড়পাড়ের বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি জসিম এই অবস্থায় কোনো কাজও পাচ্ছিলেন না। ফলে এখন নৌকা ভাড়া নিয়ে সেটি চালাচ্ছেন তিনি।
নৌকা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায়। ছবি: স্টার

হাকালুকি হাওড়পাড়ের বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি জসিম এই অবস্থায় কোনো কাজও পাচ্ছিলেন না। ফলে এখন নৌকা ভাড়া নিয়ে সেটি চালাচ্ছেন তিনি।

জসিমের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের ভাগমতপুরে। এটি হাওরপাড়ের একটি গ্রাম। এই গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় পানি জমেছে প্রায় মাসখানেক হলো। কিন্তু, গত ১০-১২ দিন ধরে রাস্তাঘাট ডুবে বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এরপর থেকেই তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। বন্যায় এখন কোনো কাজ নাই। বেকার অবস্থায় ছিলাম। আমাদের যৌথ পরিবারে ১৬ জন সদস্য। বন্যায় আমাদের পাঁচ ভাইয়ের সবাই বেকার হয়ে পড়েছি। একটা কিছু করে খাইতে হবে। তাই মাসে আট হাজার টাকা ভাড়ায় নৌকা আনছি ৬-৭ দিন হইলো। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নৌকা চালাই। দিনে চার থেকে পাঁচ শ টাকা আয় করি।'

'এখন খেয়াঘাটে যারা নৌকা চালাচ্ছে, তারা সবাই কর্মজীবী। বন্যায় তারা কাজ না পেয়ে এখন নৌকা চালাচ্ছেন', বলেন তিনি।

কথা হয় শিমুল আহমদ, আব্দুল কাইয়ুমসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে। তারা সবাই এখন মাঝি। কিন্তু, এটা তাদের কারোরই পেশা না। হাকালুকির বন্যা তাদের মাঝি বানিয়েছে। পেশায় তারা কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ কৃষক, কেউবা চালক হিসেবে কাজ করতেন।

নৌকা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায়। ছবি: স্টার

আহমদ নামে স্থানীয় এক চালক বলেন, 'পানি আসায় সমিল বন্ধ। সড়কে গলাপানি। পাঁচ জনের সংসার। খামু কী? তাই এখন নৌকা চালাই। গ্রামের মানুষরে আনা-নেওয়া করি। চার-পাঁচ দিন ধরে নৌকা চালাচ্ছি। মাসে ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় নৌকাটি নিয়েছি।'

নবাবগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কের হাকালুকি হাওরপাড়ের অনেক স্থানই এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। যেসব স্থানে কম পানি, সেখানে কিছু গাড়ি চলাচল করছে।

গতকাল বিকেলে নবাবগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কের কাদিপুর ইউনিয়নের ফরিদপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের সঙ্গে পাঁচ-সাতটি নৌকা ভেড়ানো। সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। সড়কেও দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন। সবাই যাত্রীর অপেক্ষায়। এই সবকটি নৌকাই খেয়া পারাপারের। তবে এটি কোনো খেয়াঘাট না। বন্যার পানি স্থানটিকে খেয়াঘাট বানিয়েছে। আর অন্য পেশার লোকদের বানিয়েছে খেয়া নৌকার মাঝি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাদিপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের তিলকপুর, গুপ্ত গ্রাম, ভাগমতপুর ও মাইনতাম গ্রাম আট থেকে ১০ দিন ধরে প্লাবিত। এই চার গ্রামে অনন্ত ৫০০ পরিবার পানিবন্দি। অনেকেরই ঘরে পানি উঠেছে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। কিছু বাড়িতে শুধু পরিবারের এক-দুজন সদস্য বসবাস করছেন।

গুপ্ত গ্রামের শাহাব উদ্দিন প্রয়োজনে বাড়ি থেকে সকালে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে ফরিদপুরের অস্থায়ী খেয়াঘাটে আসেন। তার সঙ্গে অতিরিক্ত কাপড়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোমরপানি পার হয়ে নৌকায় উঠেছিলেন। এরপর শুকনো কাপড় পরেন। এখন আবার নৌকা থেকে নেমে একইভাবে ঘরে ফিরবেন।

তিনি বলেন, 'ঘরের মধ্যে এখনো এক-দুই ইঞ্চি পানি। পরিবারের সবাইকে আত্মীয়র বাড়ি পাঠায়ে দিয়েছি। বাড়িতে অনেক সাপ। শুধু আমি থাকি।'

ফরিদপুর গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী রিমন আহমদ বলেন, 'এখানে কোনো খেয়াঘাট ছিল না। অনেকদিন পর এত পানি হয়েছে। এই প্রথম এখানে খেয়াঘাট হয়েছে। পানি নেমে গেলে সেটা আর থাকবে না।'

কাদিপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. হারুণ মিয়ার সঙ্গে ওই খেয়াঘাটেই দেখা। হারুণ মিয়া বলেন, 'অনেকের ঘরে হাঁটুপানি। চুলায় পানি, বাথরুমে পানি। নলকূপ পানির নিচে। বিশুদ্ধ পানি নাই। অনেকের ঘরে ধান আছে। কিন্তু, ধান কুটাতে (ধান থেকে চাল করা) পারছে না। কেউ বাজারে যেতে পারছে না।'

'সরকারি ত্রাণ কম। সরকারি ত্রাণ আশ্রয়কেন্দ্রে বেশি দিচ্ছে। গ্রামে যারা আছে, তারা কম পাচ্ছে। ২০০৪ সালের বন্যাতেও এত পানি হয়নি', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Saber Hossain Chowdhury arrested

The Detective Branch of police arrested former environment minister Saber Hossain Chowdhury from the capital’s Gulshan area today

47m ago