ফুল যার ধ্যানজ্ঞান!

শিক্ষক বকুল চন্দ্র নাথ। ফুলের প্রতি তার অন্যরকম টান। প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা সংগ্রহ করে নিজের বাড়ির আঙিনায়, ছাদে ও ফাঁকা জায়গায় লাগিয়েছেন। শুধু যে নিজের বাড়িতেই ফুল লাগিয়েছেন, তা নয়। ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছেন নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

শুধু তাই নয়, যারা ফুল ভালোবাসেন তাদেরকেও ফুলের চারা দিচ্ছেন বিনামূল্যে। বর্তমানে তার বাড়ির বাগানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৪০০ ফুলের গাছ। শিক্ষার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি তিনি ছড়াচ্ছেন ফুলের সৌরভও। ফুলই এখন তার ধ্যান-জ্ঞান।

ফুলপ্রেমী এই শিক্ষকের বাড়ি মৌলভীবাজারে বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের উত্তর বাগীরপার গ্রামে। তিনি দক্ষিণ বাগীরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

সম্প্রতি, বকুল চন্দ্র নাথ উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতের ফুলের চারা দিয়েছেন। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ফুলের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। এতে সভাপতিত্ব করেছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন। এরপরই ফুলপ্রেমী এই শিক্ষক সবার নজর কাড়েন।

বকুল চন্দ্র নাথ। ছবি: স্টার

ফুলের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনিয়েছেন শিক্ষক বকুল চন্দ্র নাথ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফুল পবিত্র, সৌন্দর্যের প্রতীক। সবাই পছন্দ করেন। যখন আমি ফুল গাছের পরিচর্যা করি, তখন আমার মন ভালো থাকে। ফুল গাছের নানা উপকারিতাও আছে।'

'বাড়ির পাশাপাশি নিজের কর্মস্থলেও ফুলের গাছ লাগিয়েছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনায়, ছাদে ও ফাঁকা জায়গায় লাগিয়েছি। নতুন একটা জায়গা করেছি ফুল গাছের জন্য।'

বর্তমানে তার সংগ্রহে আছে গোলাপ, এডোনিয়াম, জবা, রুয়েলিয়া, কসমস, ডালিয়া, রঙ্গন, সানসেট বেল, সন্ধ্যামালতী, নয়নতারা, পাতাবাহারসহ নানা জাতের ফুল। বলেন, 'যারা আমার এখানে ফুল দেখতে আসেন, ফুল ভালোবাসেন, তারা ফুল নিতে চাইলে দিই। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিনামূল্যে ফুলের চারা দিয়েছি। সম্প্রতি, উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতের ফুলের চারা দিয়েছি।'

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক বকুল চন্দ্র নাথ সারাজীবন শিক্ষার আলো বিলিয়েছেন। চলতি বছরেই তিনি চাকরি থেকে অবসরে যাবেন। সেসময় তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফুলের গাছ লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

বকুল চন্দ্র নাথ। ছবি: স্টার

বকুল চন্দ্র নাথ বলেন, 'আমার চাকরি শেষ পর্যায়ে। কয়েকদিন পর অবসরে যাব। ইচ্ছা আছে, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের হাতে ফুল গাছ লাগাবো। যদি সেখানকার শিক্ষকরা আগ্রহী হন, সহযোগিতা করেন তাহলে আমি সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলে ফুলে ভরে দিতে চাই।'

বড়লেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বকুল স্যার সারা জীবন শিক্ষার আলো বিলিয়েছেন। এখন উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফুলের চারা বিলাতে চাচ্ছেন। আমরা তার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। তাকে সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত।'

তিনি আরও বলেন, 'বকুল স্যারের এমন নান্দনিক উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া ও মূল্যায়ন করা উচিত। উপজেলা প্রশাসন তাকে যথাযথ সহযোগিতা ও পুরস্কৃত করবেন বলে আমি আশা করি।'

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

17h ago