পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ নিয়ে সংসদে বিতর্ক

ফাইল ছবি

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থপাচারকারীদের টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে-বিপক্ষে সংসদে বক্তব্য রেখেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য।

আজ বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপার সাধারণ আলোচনায় সরকারি দলে একাধিক সদস্য বলেন অপ্রদর্শিত আয় প্রকাশ হলে বিনিয়োগ বাড়বে। আর বিরোধী দলের সদস্যরা বলছেন, এর ফলে টাকা পাচার আরও বাড়বে।

গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশ থাকা সম্পদের দায়মুক্তির দিয়ে দেশে আনার সুযোগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এর ফলে ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে, সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। ওই অর্থের উৎসব জানতে চাওয়া হবে না।

এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ বলেন, 'অপ্রদর্শিত টাকা থেকে থাকলে তা কোনো কাজে লাগছে না। সেটা ব্যবহারের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা অর্থ পাচারের বিষয় নয়। অর্থ পাচারের জন্য যে আইন আছে সেটা অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় আনা যাবে। হলে টাকা কাজে লাগবে। অপ্রদর্শিত আয়কে যদি প্রকাশ বা বিনিয়োগ করা না যায় তাহলে সমৃদ্ধি সম্ভব হবে না।'

মৌলভীবাজারের এই সংসদ সদস্য বলেন, চা শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তা দিয়ে তাদের চলে না। দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি তোলেন তিনি।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো রূপরেখা অর্থমন্ত্রী দেননি। তিনি টাকা পাচার করে তা হালাল করারা সুযোগ দিয়েছেন। ৪০ বছর যাবৎ বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়েছে খুব কম। ব্যবসা করলে ২৫ শতাংশ কর দেওয়া লাগে। আর টাকা পাচার করে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে আনা যাবে। এতে মানুষ টাকা পাচারে উৎসাহী হবে। শুধু এটাই না, এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন, সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব আইন সংশোধন করা না হলে টাকা কীভাবে আনবেন? কোনো সুযোগ নেই।

কালো টাকা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে চুন্নু বলেন যে, তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তার ঢাকায় ফ্ল্যাট নেই, স্ত্রীর বাসায় অনেক দিন থেকেছেন। ২০১০-১১ সালে একটি প্লট পেয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী এখন তিনি কালো টাকার মালিক।

শুধু তাই নয় রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে যারাই ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক তারা কালো টাকার মালিক। তিনি আইন লঙ্ঘন করে কালো টাকার মালিক হয়েছেন কিনা সংসদে অর্থমন্ত্রীকে ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি জানান।

দ্য গুড, দ্য ব্যাড, দ্য আগলি সিনেমার মতো তিনি বাজেট প্রস্তাবকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন জানিয়ে বলেন, 'ভালো বিষয়গুলো সরকারি দল বলবে। ব্যাড হলো এমন প্রকল্প রাখা হয়েছে যেগুলোর দরকার নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টির রূপকল্প নেই। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের কারণে বেসরকারিখাতে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা না থাকায় মানুষ চাপে পড়বে। দরিদ্র মানুষ চাপে পড়বে। করমুক্ত সীমা না বাড়ায় মধ্যবিত্ত শান্তি পাবে না। আর সবচেয়ে খারাপ হলো পোশাক খাতে এমনিতেই চ্যালেঞ্জে আছে, সেখানে উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে, এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার অপকর্মকে আইনি সুযোগ দেওয়া হবে। এতে টাকা পাচার উৎসাহিত করা হবে।'

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, এটি ব্যতিক্রমী বাজেট। ঐতিহাসিক মানবিক বাজেট। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে জোর দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য অনেক মানুষ বিদেশ যাচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটকে জরুরি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

সরকারি দলের সদস্য আ ক ম সরোয়ার জাহান বলেন, 'কর দিয়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা সঠিক। তবে এজন্য কর ৭ শতাংশ নয় ১০ শতাংশ করা দরকার।'

অপ্রদর্শিত অর্থও ১০ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, 'এই বাজেটে শুধু লুটেরারা সুযোগ পেয়েছে। গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ঠরা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছে, সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল করেছে। যারা টাকা পাচার করেছে তারা যদি সামান্য কর দিয়ে টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ পায় তাহলে যারা কর দেন তারা উৎসাহ হারাবেন। তিনি বলেন, বাজেটে বড় ব্যবসায়ী ও ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।'

সরকারি দলের ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, 'এই বাজেটে আমি কোথায়? আমার এলাকা কোথায়? আমরা যখন বাজেট নিয়ে কথা বলছি, তার অনেক আগেই বাজেট লেখা হয়ে যায়। আমাদের কিছু করণীয় নেই। আমার প্রস্তাব হবে, বাজেট অধিবেশন হবে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসে। সেখানে আমরা বক্তব্য রাখব। আমাদের এলাকার বিষয়ে কথা বলব। মাননীয় মন্ত্রীরা সেগুলো কম্পাইল করে বাজেট উপস্থাপন করবেন।'

আলোচনায় আরও অংশ নেন সরকারি দলের আব্দুস শহীদ, নূর মোহাম্মদ, শাহে আলম, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, দীপংকর তালুকদার, আ ক ম সারোয়ার জাহান, এম এ মতিন ও মনোরঞ্জন শীল গোপাল।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

3h ago