নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: গোলযোগের আশঙ্কা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করোপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র ২ দিন বাকি। এরই মধ্যে ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।
তবে আলোচনার শীর্ষে থাকা ২ মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভি ও তৈমূর আলম খন্দকার আশা করছেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। নারায়ণগঞ্জ শহরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ১৪৮ জন কাউন্সিলর পদের জন্য লড়ছেন। এ ছাড়া, ৯টি সংরক্ষিত আসনের জন্য ৩৪ জন নারী প্রার্থীও নির্বাচনে লড়বেন।
ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কারণ ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিনি প্রিসাইডিং অফিসারদের অনুরোধ করেছেন, মাস্ক ছাড়া কোনো ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দিতে এবং এটা নিশ্চিত করতে যে, সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন।
উদ্বেগ
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার একজন ভোটার জানান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সবাই নির্বাচনে জেতার জন্য জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'কাউন্সিলর নির্বাচন ঘিরে গোলযোগের আশঙ্কা রয়েছে। একজন প্রার্থীর সমর্থকরা ইতোমধ্যে তাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেন।'
১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রায়হান হোসেন জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে এই ওয়ার্ডের ২ মূল কাউন্সিলর প্রার্থী ওমর ফারুক ও মাহমুদুর রহমানের সমর্থকরা বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
'আমার আশঙ্কা, (প্রার্থীদের মধ্যে) এ ধরনের দ্বন্দ্বের কারণে ভোটগ্রহণের দিন গোলযোগের সৃষ্টি হতে পারে,' যোগ করেন তিনি।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অশির বরণ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, কয়েকজন প্রার্থী ভোট কেনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'একদল মানুষ গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারেন। আমি নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার উদ্বেগের বিষয়ে লিখিতভাবে জানাবো।'
২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদপ্রার্থী ইশরাত জাহান খান স্মৃতি জানান, যেহেতু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, কিছু গোলযোগের সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তিনি অভিযোগ করেন, 'কিছু প্রার্থী ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিপক্ষের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন।'
গতকাল আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভি জানান, এখন পর্যন্ত শহরের নির্বাচনী পরিবেশ সার্বিকভাবে ভালো আছে। তিনি আরও জানান, ভোটগ্রহণের দিনেও পরিবেশ অপরিবর্তিত থাকুক এটাই তিনি চান।
আইভি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) সর্বশেষ ২টি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে যাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় না পায়।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, পুলিশ তার সমর্থকদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে এবং একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।
গতকাল নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি অথচ তারা আমার সমর্থকদের হয়রানি করছেন। আমি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া আর কিছুই চাই না, যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে কোনো ধরনের কারসাজি ঠেকাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।'
এ ছাড়া, গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বৈঠকের পর শহরের একটি স্কুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'তিনি (সংসদ সদস্য) নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কিন্তু সে লঙ্ঘনের মাত্রা এমন নয় যে তাকে এ বিষয়ে কোনো নোটিশ বা শাস্তি দিতে হবে অথবা তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।'
প্রিসাইডিং অফিসারদের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ব্যক্তিগত পর্যায়ে একজন মানুষ কোনো একটি দল বা ব্যক্তির সঙ্গে একমত না-ও হতে পারেন কিন্তু আপনি যখন নির্বাচনী দায়িত্বে আছেন, তখন আপনাকে আপনার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।'
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, কিছু ওয়ার্ডে উত্তেজনা রয়েছে এবং সেসব জায়গার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সব ভোটকেন্দ্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথেষ্ট পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হবে, যাতে কেউ কোনো ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারে।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments