নাহিদের স্বজনদের কান্নায় ভারী ঢাকার আকাশ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সংঘর্ষে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসানের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও মমতাময়ী মা। শোকে বাকরূদ্ধ পিতা নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। তাদের আহাজারিতে আরও ভারী হয়েছে ঢাকার আকাশ। সেও যেন কাঁদছে, অনবরত বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়।
নাহিদের স্ত্রী ডলির কান্না কিছুতেই থামছে না। তাকে জড়িয়ে ধরে আছেন নাহিদের খালা ডালিয়া। ইনসেটে নাহিদ। ছবি: পলাশ খান/স্টার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সংঘর্ষে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসানের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও মমতাময়ী মা। শোকে বাকরূদ্ধ পিতা নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। তাদের আহাজারিতে আরও ভারী হয়েছে ঢাকার আকাশ। সেও যেন কাঁদছে, অনবরত বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়।

নাহিদের স্ত্রী ডলির কান্না কিছুতেই থামছে না। স্বামীর স্মৃতি বার বার স্মরণ করছেন, আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

ডলি বলেন, 'আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। নাহিদকে তাই কাল কাজে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু সে তা মানেনি। সে বলে, করোনায় কাজ বন্ধ ছিল অনেকদিন। এই রোজার মাসে আর কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। বস ফোন দিয়েছে। কাজে যেতে হবে, মার্কেটিং করতে হবে। এই বলে সে সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর আর আমার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি।'

'এরপর শুনি সে মারামারির মধ্যে পড়ে আহত হয়েছে। বসকে ফোন করে জানিয়েছে, আমি গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গেছি, বের হতে পারছি না। ভালো একটা মানুষ বাড়ি থেকে বের হলো। এরপর কীভাবে কী হয়েছে জানি না', এই বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কিছুক্ষণ আহাজারির পর ডলি বলেন, 'আমি এ ঘটনার বিচার চাই। সরকারের কাছে বিচার চাই। সরকার কি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে?'

পাশ থেকে ডলিকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন নাহিদের মা নারগিস বেগম। তিনি বলেন, 'আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে আর হয় না। সে কোনোদিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি, মারপিট করেনি। সে সুস্থ দেহে কাজে বের হয়েছিল। এখন লাশ হয়ে ফিরেছে। আমি এ শোক সইবো কেমন করে?'

নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন। ছবি: পলাশ খান/স্টার

নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন শোকে বাকরুদ্ধ। মর্গে বসে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলেন মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে।

তিনি বলেন, 'আমার ৩ ছেলে। নাহিদ সবার বড়। গতকাল আমি সকাল ৭টায় কাজে চলে যাই। পরে শুনি বসের ফোন পেয়ে নাহিদ কাজে বের হয়েছে। তারপর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে পরে সে আহত হয়। আমার ছেলেকে কে বা কারা মেরেছে, তা জানি না।'

'ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। আমি বিচারের ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। আর বাকি যা করার প্রধানমন্ত্রী করবেন বলে প্রত্যাশা করি', যোগ করেন তিনি।

নাহিদের খালা ডালিয়া জানান, নাহিদ ও ডলি ৬ মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। পরিবারের সবাই কামরাঙ্গীরচরে একই বাসায় থাকতেন। নাহিদ স্ত্রীকে নিয়ে ৩ তলায় আর বাবা-মা ২ তলায় থাকতেন। বাবা এবং নাহিদই ছিল সংসারের উপার্জনকারী ব্যক্তি। তবে নাহিদই সবকিছু দেখাশোনা করতেন। প্রাণপ্রিয় ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়। 

কয়েকদিন আগে হাতে মেহেদী দিয়েছিলেন ডলি। সেখানে নাহিদের প্রতি তার ভালোবাসার কথা লেখা। সেই মেহেদীর রঙ এখনো মুছে না গেলেও হারিয়ে গেছে প্রাণপ্রিয় স্বামী। ছবি: পলাশ খান/স্টার

কয়েকদিন আগে হাতে মেহেদী দিয়েছিলেন ডলি। সেখানে নাহিদের প্রতি তার ভালোবাসার কথা লেখা। সেই মেহেদীর রঙ এখনো মুছে না গেলেও হারিয়ে গেছে প্রিয় মানুষটি।

উল্লেখ্য, নিউমার্কেট এলাকায় গত সোমবার দিবাগত রাতের পর গতকাল মঙ্গলবার দিনভর সংঘর্ষ হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসান (১৮) গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার সড়ক আজ বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ শান্ত দেখা গেছে। সড়কে ব্যবসায়ী-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ বিবদমান কোনো পক্ষের উপস্থিতি দেখা যায়নি। নীলক্ষেত-নিউমার্কেট এলাকার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

11h ago