দেশে তৈরি রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতির অপেক্ষায়

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ল্যাবে তৈরি ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের রকেট ধুমকেতুএক্স ০.২। ছবি: টিম ধুমকেতুএক্স এর সৌজন্যে

প্রায় ৫ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে রকেট তৈরির দাবি করছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (এমইসি) কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। কলেজের গবেষণা কেন্দ্র আলফা সায়েন্স ল্যাবে তৈরি হয়েছে প্রোটোটাইপ রকেট ধূমকেতু। রকেটগুলো উৎক্ষেপণে সহযোগিতা ও অনুমতি চেয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক আজ বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ল্যাবের গবেষক-শিক্ষার্থীরা রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রক্রিয়াধীন আছে। দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা পাঠিয়ে দেবো।'

'আশা করছি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে,' বলেন তিনি।

রকেট তৈরি প্রকল্পের টিম লিডার ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রথমে তরল জ্বালানির রকেট ইঞ্জিন ডিজাইন করেছিলেন। তরল জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় পরে বিকল্প হিসেবে সলিড ফুয়েলের ৩টি ইঞ্জিন তৈরি করেন।

৬ ফুট উচ্চতার ৪ ইঞ্চি ব্যাস ও ১২ ফুট উচ্চতার ৬ ইঞ্চি ব্যাস আকারের রকেটগুলো এখন উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত ধাপে আছে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, গ্লাসফাইবারের বডির এ রকেটগুলোর ওজন যথাক্রমে ১২ কেজি ও ৩০ কেজি।

কলেজের মাঠে রাখা ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের রকেট ধুমকেতুএক্স ০.১। ছবি: টিম ধুমকেতুএক্স এর সৌজন্যে

নাহিয়ান বলেন, 'গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্বে এ রকেটগুলো ছোঁড়া যাবে। ছোঁড়ার পর রকেটগুলো গ্রাউন্ড কন্ট্রোল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্যারাসুট ব্যবহার করে নিরাপদে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।'

এ প্রকল্পের ডেপুটি টিম লিডার নিয়ামুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় থেকেই নাহিয়ানের সঙ্গে আমি রকেট তৈরি নিয়ে গবেষণা চালাই। স্নাতক শেষ করে ২০১৮ সাল থেকে রকেট তৈরির বিষয়ে কাজ শুরু করি।'

'এখন যে প্রোটোটাইপ রকেট তৈরি করেছি তা উৎক্ষেপণ করা প্রয়োজন। এতে আমাদের হিসাব-নিকাশ গবেষণা কতটুকু সফল হলো বোঝা যাবে। তা না হলে ভুলত্রুটিগুলোও ধরা যাবে না,' বলেন তিনি।

প্রথমে অল্প জ্বালানি ব্যবহার করে অল্প উচ্চতায় পাঠিয়ে এগুলোর উৎক্ষেপণযোগ্যতা পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

৬ ফুট উচ্চতার রকেট ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার এবং ১২ ফুট উচ্চতার রকেট সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত পাঠানো সম্ভব হবে বলে দাবি করেন তিনি।

নিয়ামুল জানান, রকেট উড্ডয়নে ও অবতরণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা এড়াতে কোনো ফাঁকা জায়গায় যেমন নদীর চরে এর পরীক্ষা চালানো যেতে পারে।

নাহিয়ান ও নিয়ামুলসহ একই কলেজের মোট ১০ জন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী রকেট তৈরিতে কাজ করছেন।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সহযোগিতায় শিগগিরই তারা রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে তাদের এ গবেষণাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন।

কলেজের লাইব্রেরি ভবনের সামনে রকেটসহ টিম ধূমকেতুএক্স এর সদস্যরা। ছবি: টিম ধূমকেতুএক্স এর সৌজন্যে

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের রকেট তৈরিতে কলেজের পক্ষ থেকে আলফা সায়েন্স ল্যাবকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কলেজের শিক্ষকদের দিয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।'

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রকেট তৈরি প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট আছেন কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের প্রভাষক আব্দুল ওয়াহিদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ করে থিওরিটিক্যালি ও সিমুলেশন করে নিরাপদে উৎক্ষেপণ ও অবতরণের জন্য রকেটগুলো প্রস্তুত করেছি। বাকিটা বাস্তব পরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে।'

তিনি জানান, উৎক্ষেপণের পর রকেট নিয়ন্ত্রণে (কন্ট্রোল অ্যান্ড কমিউনিকেশন) লো পাওয়ার ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক মডিউলেশেন টেকনিক (লোরা) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

দেশে মহাকাশ প্রকৌশল বা স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

আলফা ল্যাবের রকেট তৈরির বিষয়ে জানতে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়।

তারা জানান, 'প্রজেক্টটি সফল হলে ভবিষ্যতে অনুরূপ রকেটকে মূলত আবহাওয়া গবেষণা ও পূর্বাভাসের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে রকেটটিকে মোটামুটি ৪৫-১৪৮ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে হবে।'

এ ধরনের প্রকল্প ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মতো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণযোগ্য রকেট তৈরি করতে অনুপ্রেরণা ও অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এ সব ক্ষেত্রে দেশি প্রকৌশলী ও গবেষকদের পাশাপাশি নাসা, চীন, রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা এবং পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে বলেও জানান তারা।

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সহকারী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী রকেট নিয়ে গবেষণা করছে বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমরা শিক্ষকমণ্ডলী এটা নিয়ে আলোচনা করেছি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের কারিকুলামের আওতায় স্টুডেন্ট প্রজেক্টে এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। ইতোমধ্যে আমাদের এখানে ইউএভি বা আনম্যানড অ্যারিয়েল ভিভাইকেল ও রাডার নিয়ে কাজ করেছি।'

'এর বাইরেও রকেট নিয়ে কাজ করতে দেশের আগ্রহী তরুণদের নিয়ে আমরা ওয়ার্কশপ জাতীয় প্রোগ্রাম করে নলেজ শেয়ারিং করার আশা রাখি,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

25m ago