মুন্সিগঞ্জ

লঞ্চডুবিতে নিহত-নিখোঁজদের বাড়িতে যাননি প্রশাসনের কেউ

লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ আছেন মুন্সিগঞ্জ সদরের যোগনীঘাট এলাকার হাতেম আলী বেপারি। তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মুন্সিগঞ্জে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ও ২ জন নিখোঁজ আছেন। ওই পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। তবে নিহত ও নিখোঁজদের বাড়িতে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাদের যেতে দেখা যায়নি। পাশে গিয়ে সহায়তার হাত বাড়ানোর আশ্বাস দেয়নি কেউ।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ গ্রামের মো. দীন ইসলামের স্ত্রী আরিফা বেগম (৩০) ও তার দেড় বছর বয়সী ছেলে মো. সাফায়েত হোসেনের লঞ্চডুবিতে মৃত্যু হয়েছে। শ্বশুর আব্দুর রবকে (৬৫) নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ডাক্তার দেখিয়ে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে ফিরছিলেন তারা ৩ জন। তাদের মধ্যে আব্দুর রব বেঁচে ফিরলেও মারা যান আরিফা ও তার ছেলে।

তাদের মরদেহ রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে নেওয়া হয়। রমজানবেগ কবরস্থানে দাফন করা হয় রাত দেড়টার দিকে।

আরিফা বেগমের ননদ ডালিয়া বেগম সোমবার সন্ধ্যায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোববার দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউই আমাদের খোঁজখবর নেননি। সান্ত্বনা দিতেও কেউ বাড়িতে আসেনি। সকাল থেকে শুধু সাংবাদিকরা এসেছে।'

তিনি জানান, মৃত আরিফার স্বামী একজন কৃষক। স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।

তবে ২ জনের দাফন সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

লঞ্চডুবির পর থেকে মুন্সিগঞ্জ সদরের যোগনীঘাট এলাকার মোমেলা বেগমের (৫০) স্বামী হাতেম আলী বেপারির (৬০) খোঁজ মেলেনি এখনো।

হাতেম আলী বেপারিরর স্ত্রী মোমেলা বেগম। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

১ মাস আগে কুয়েত থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চডুবির পর থেকে নিখোঁজ তিনি।

তার পুত্রবধূ জিউপি বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুপুরে লঞ্চডুবির ঘটনার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার শ্বশুরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময়ের মধ্যে বাড়িতে প্রশাসনের কেউ এসে খোঁজখবর নেয়নি।

মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা মো. জয়নাল ভূঁইয়া (৫৫) লঞ্চডুবির পর সাঁতরে তীরে উঠলেও, শ্বাস কষ্টজনিত কারণে মারা যান। রোববার রাতে তাকে মুন্সিগঞ্জে বাড়িতে নেওয়া হয়। আজ সোমবার সকাল ৭টায় জানাজা শেষে উত্তর ইসলামপুর এলাকায় তার দাফন হয়।

মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিকুল হাসান তুষার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জয়নালের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি মারা যাওয়ায় আরও সমস্যা হয়ে গেল। এ পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে প্রশাসনের কেউই আসেননি।'

এদিকে, রোববার দুপুরে লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হন মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ইসমানির চর গ্রামের সহোদর দুই বোন স্মৃতি রাণী (১৮) ও আরোহী রাণী (৩)। রোববার রাতে বড় বোন স্মৃতি রাণীর মরদেহ পাওয়া গেলেও, আরোহী এখন নিখোঁজ। শীতলক্ষ্যার পাড়ে নিখোঁজ মেয়ের সন্ধানে অপেক্ষা করছেন বাবা জয়রাম রাজবংশী।

স্মৃতি রাণী সরকারি হরগংগা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। রোববার রাতেই তার দাহ করা হয়।

হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তার হাজী ডেইলি স্টারকে জানান, '২ সন্তানের মধ্যে একজনের লাশ মিললেও একজনের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ গিয়েছিল কি না, এ ব্যাপারে জানা নেই।'

তবে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলছেন, লঞ্চডুবিতে নিহত ও নিখোঁজদের বাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের যাওয়ার কথা ছিল।

সোমবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ঢাকায় একটি মিটিংয়ে আছি। এটি হওয়ার কথা না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।'

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, 'নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে তালিকা নেওয়া হয়েছে। এখনই নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের কাছে যাওয়া হচ্ছে।'

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English
BDR protest Kakrail today

Cops use water cannons to disperse protesting dismissed BDR members in Kakrail

Police barred them when they were marching towards the chief adviser’s residence, Jamuna

1h ago