ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়: জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার
মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
গত ১৩ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫০তম অধিবেশনে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মিথ্যা সংবাদ প্রতিরোধ আইন সাধারণত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ১৯ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বৈধতা, বৈধ লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তার ত্রিমুখী পরীক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ আইনের একটি উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। যা জাতীয় নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধ ও ভুল তথ্যসহ অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত বিভিন্ন কাজের জন্য 'ড্রাকোনিয়ান' বা কঠোর শাস্তি আরোপ করে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রবেশকারী তদন্ত, অনুসন্ধান এবং বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা প্রদান করে।
এই আইন ব্যবহারের ফলে সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং অনলাইন ও অফলাইনে সাংবাদিকতা স্থবির হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইনটি বাতিলে তার আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেন।
যেসব দেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন আইন গ্রহণ বা প্রয়োগ করেছে তার মধ্যে আছে- কিউবা, ফ্রান্স, ইতালি, মালয়েশিয়া, কাতার এবং সিঙ্গাপুর।
মিডিয়ার স্বাধীনতার বৈশ্বিক পরিস্থিতি বর্ণনা করে আইরিন খান বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি যুগান্তকারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার নতুন মডেল, পাঠকের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ফ্যাক্ট-চেকিং এবং মাউস-ক্লিকের মাধ্যমে তথ্যের ভাণ্ডার এবং বিভিন্ন ট্রেজারে অ্যাক্সেস সক্ষম করেছে।
যাইহোক, এটি সংবাদ শিল্পের জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ এবং পরিবর্তনের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, বিদ্যমান হুমকিগুলোকে বাড়িয়ে তুলেছে এবং নতুন হুমকি তৈরি করেছে। দায়মুক্তিসহ সাংবাদিকদের ওপর সহিংস আক্রমণ এবং আইনি হয়রানির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, বিষয়বস্তু সেন্সরশিপ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কারসাজি ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্বারা আবদ্ধ, বৃদ্ধি এবং পরিবর্ধিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য নতুন উদ্বেগের মধ্যে আছে লিঙ্গভিত্তিক অনলাইন সহিংসতা, সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু ও নজরদারি, অনলাইনে তথ্য সীমাবদ্ধ করার আইন, রাষ্ট্র বা করপোরেট স্বার্থে 'মিডিয়া ক্যাপচার' এবং ভাইরাল বিভ্রান্তিকর প্রচারাভিযান যা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি জনসাধারণের আস্থাকে হ্রাস করে।
তিনি সুপারিশ করেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বহুত্ববাদকে এগিয়ে নিতে জাতীয় পর্যায়ে দেশগুলোকে মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা এবং অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন সমস্যাগুলোর ওপর ভিত্তি করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা উচিত।
আইরিন খান আরও বলেন, দেশগুলোর উচিত সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা।
Comments