‘জ্বালানি সাশ্রয়ে সপ্তাহে একদিন প্রাইভেটকার বন্ধ করেন, সবাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে’

জ্বালানি সাশ্রয়ে সপ্তাহে একদিন প্রাইভেটকার বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আয়োজিত জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি সাশ্রয়ে সপ্তাহে একদিন প্রাইভেটকার বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আজ রোববার রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে 'বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট' বিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ পরামর্শ দেন।

এতে মূল আলোচকের বক্তব্যে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সরকারের উচিত জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও গ্যাস ব্যবহার করা। এ জন্য অবিলম্বে দেশের কয়লা ও গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার পানিসম্পদ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারে যা কম ব্যয়বহুল।'

শিগগির এ ধরনের উদ্যোগ না নিলে আগামী ৮-৯ বছর পর দেশ মারাত্মক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হুঁশ হয়েছে। তিনি গত এক মাস ধরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলছেন। অপচয় বন্ধ করবেন ভালো কথা, সেটা তো আপনার ঘর থেকে আগে শুরু হবে। আপনি যে আমাদের জানিয়েছেন, এর আগে আপনার সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান, প্রেসিডেন্ট সাহেবের বাসস্থান, অকারণ পুলিশের চলাফেরা এসব কাজে বর্তমান সাশ্রয়ের আগের দিন পর্যন্ত কত বিদ্যুৎ ব্যয় হয়েছে, সেই সংখ্যাটি জানান।'

'তারপর বলেন আপনার বাড়িতে একটা এয়ারকন্ডিশন (এসি) ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করেছেন কিনা? প্রেসিডেন্ট সাহেবের বাসস্থানে একটা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করেছেন কিনা? ফ্যানের বাতাসে সন্তুষ্ট আছেন কিনা? এ তথ্য গুলো আগে দেন,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সরকার তথ্যে বিশ্বাস করে না। সম্প্রতি বাংলাদেশে যে বাজেট পাশ হয়েছে, এখানে পরিসংখ্যান বিভাগের ৮০ শতাংশ বরাদ্দ কেটে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে আমাদের সাড়ে ১৭ কোটি থেকে ১৮ কোটি লোক সাড়ে ১৬ কোটি হয়ে গেল?'

তিনি বলেন, 'সরকার তো জানে এসব তথ্য ঘরে বসে তৈরি হয়। কাজেই তিনি বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের বরাদ্দ কমেছে, কারণ তারা জানে মুখে যত কথাই বলি, বিচার বিভাগ তো মেরুদণ্ডবিহীন। একইসঙ্গে প্রবাসীদের বরাদ্দ কমেছে।'

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশে যদি জ্বালানি সাশ্রয় করতে চান তাহলে সপ্তাহে অন্তত একদিন সব প্রাইভেটকার বন্ধ করেন, শুধু অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের ন্যূনতম গাড়ি আর হাসপাতালের চিকিৎসকদের গাড়ি চলবে। বাকি সবাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে।'

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনি সত্যকে গ্রহণ করতে শিখুন। তা না হলে বিপদ অতি নিকটে। সম্ভবত আর সময় নেই।' 

'খালেদা জিয়াকে ছাড়া আন্দোলন সফল হবে না' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে না আনলে আন্দোলন গড়ে উঠবে না এবং এ বেল পাওয়া জামিন পাওয়া তার অধিকার। কারণ খুনের আসামি জামিন নিয়েছে। উনি পাবেন না, এটি হবে না। এ ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা আছে। সরকারের চক্রান্ত আছে। বিচার বিভাগের বিচারহীনতা আছে।'

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, 'এ সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন জনগণের বাকি সরকারের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার।'

তিনি বলেন, 'দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণ জাগরণের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে, সরকারকে বিদায় করে সাধারণ রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে পারলে দেশকে বাঁচানো সম্ভব হবে। সরকার ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারবে না।'

দেশে বিদ্যুৎ সংকট প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'সরকার এই বিদ্যুৎ সংকট বুঝে শুনে করেছে। তাই তারা ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে পারবে না। যদিও তারা বলছে আগামী অক্টোবর নভেম্বর থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'কুইক রেন্টাল যখন করা হচ্ছিল তখন এ বিষয়ে অনেক কথাবার্তা বলা হয়েছে।  বলা হয়েছে ৩ বছরের বেশি স্থায়িত্ব থাকবে না। এখন ১৬ বছর হয়ে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছেন ১৭ হাজার কোটি টাকা।'

আইএমএফের লোন পাওয়া দুষ্কর উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, 'আইএমএফ কোনো দেশকে টাকা দিলে দেশটি সেই টাকা ফেরত দিতে পারবে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে, দেশটির রিজার্ভের সঠিক হিসাব। বর্তমান সরকারের রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।'

রেজা কিবরিয়া বলেন, 'বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটসহ সব সংকটের মূল কারণ এই আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি। বর্তমানে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ১২ শতাংশের বেশি। কিন্তু সরকার তা গোপন করছে। দিনদিন মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে।'

গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'বিএনপি সরকার খাম্বা বানিয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ দেয়নি। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুতের কারখানা বানিয়েছে কিন্তু জ্বালানি নেই। আসলে বিদ্যুৎ সংকট কাজে লাগিয়ে কীভাবে ব্যবসা করা যায়, কীভাবে কত দ্রুত পকেটে টাকা ঢুকানো যায় সেটা পরিকল্পনায় ছিল। বর্তমানে আমরা যে বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে পড়েছি এটা ভুলনীতি, পরিকল্পনাহীনতা এবং বিপুল দুর্নীতির সম্মিলিত ফল।'

গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও সাবেক ডাকসু ভিপি নূরুল হক নুর বলেন, 'জ্বালানি সংকট নিয়ে যদি আমরা আলোচনা না করি, এই সংকট সমাধান হবে না। জ্বালানির সঙ্গে দুর্নীতি সরাসরি জড়িত, সরকারের লোকদের কয়েকটি কোম্পানি এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।'

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী খন্দকার সালেখ সুফী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর বহ্নিশিখা জামালী বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Prof Muhammad Yunus for a road map to reforms and the next general election.

6h ago