চট্টগ্রামে সড়ক প্রশস্ত করতে কাটা হচ্ছে ৬২২টি গাছ

ছবি: স্টার

গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে মহাসড়কের পাশে। একটি বা দুটি নয়, একশটিরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের একটি অংশে এ দৃশ্য দেখা গেছে। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে পটিয়া বাইপাস এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করতে এই গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। 
 
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা, মনসা মোড় ও বাদামতল মোড়ে শ্রমিকরা গাছ কাটায় ব্যস্ত। তারা করাত ও কুড়াল দিয়ে গাছ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখছিলেন। কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে রেইন ট্রির প্রাধান্য ছিল। 
 
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক মাস আগে থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শিকলবাহা থেকে বাদামতল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।
 
মানসা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কেটে ফেলা অনেক গাছের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর। 'শ্রমিকদের গাছ কাটতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল, অনেকগুলো গাছের বয়স প্রায় আমার সমবয়সী,' বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব রহিম। 

ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'এই গাছগুলো খুব উপকারী। এরা আমাদের ছায়া ও বাতাস দেয় এবং এলাকার পরিবেশ শীতলরাখে। এ ছাড়া বছরের পর বছর ধরে এইসব গাছে শত শত পাখি বাসা বেঁধেছে এবং গাছ কেটে ফেলায় পাখিরা তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে।'

বাদামতল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব গাছের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে- সম্পর্কটা হলো হৃদয়ের। গাছ কাটতে দেখে আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগে। কারণ তারা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো বছরের পর বছর ধরে রোদ-বৃষ্টি থেকে আশ্রয় দিয়ে আসছে।'

তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি যে ১ হাজারেরও বেশি গাছ কাটা হবে এই প্রকল্পের জন্য।'
  
'স্থানীয়দের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই গাছগুলোর সঙ্গে। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক গাছ একসঙ্গে কাটার কারণে অবশ্যই পরিবেশের ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলব। কীভাবে কাটার জন্য নির্বাচিত গাছের সংখ্যা কমানো যায়, সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার', বলেন মিজানুর।

জানা গেছে, ৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে মার্চে, যা শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের মার্চে। ২ লেনের রাস্তাটি বর্তমান ১৮ ফুট প্রস্থ থেকে ৩৮ ফুট প্রস্থে প্রসারিত করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য, আরএইচডি বন বিভাগের কাছে প্রকল্প এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৪টি গাছ কাটার জন্য আবেদন করে।
 
যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রামের (দক্ষিণ অঞ্চল) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরএইচডি প্রথমে গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের (ডিওএফ) কোনো অনুমতি নেয়নি। বন সামগ্রী পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ অনুসারে, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে গাছ কাটার জন্য ডিওএফ-এর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাদের নোটিশে বিষয়টি জানালে, গত মাসে তারা প্রকল্প এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৪টি গাছ কাটার অনুমতির জন্য আবেদন করে। যেহেতু এটি জনস্বার্থ সম্পর্কিত একটি উন্নয়ন প্রকল্প, তাই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর রাস্তার ২ পাশে গাছ লাগানোর শর্তে আমরা তাদের গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছি।'
 
যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রামের আরএইচডি (দোহাজারী ডিভিশন) নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, 'রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা দরকার ছিল।'

কাটার জন্য নির্বাচিত গাছের সংখ্যা কমানো যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রথম দিকে আমরা ১ হাজার ৮৪টি গাছ কাটার চিন্তা করলেও এখন মোট ৬২২টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

প্রকল্পটি শুরু করার আগে পরিবেশের কোনো মূল্যায়ন করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, '''এই ধরনের 'ছোট প্রকল্পের' জন্য এই ধরনের সমীক্ষা চালানোর 'কোনো সুযোগ' নেই।'

তিনি বলেন, 'প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আমরা রাস্তার দুই পাশে যত সংখ্যক গাছ কাটা পড়ে তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি গাছ লাগাব।'

যোগাযোগ করা হলে, পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিপুল সংখ্যক গাছ একত্রে কেটে ফেলা হলে প্রকৃতির ওপর নিশিচতভাবে খুব বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে, এলাকায় অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইডের অনুপাতের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার প্রভাব হবে মারাত্মক।'

'বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। অন্যান্য দেশে এখন উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রেখে।' 

তিনি বলেন, 'এমনকি মালয়েশিয়াতেও পাহাড় ও গাছ রক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় কিন্তু আমাদের দেশে কর্তৃপক্ষকে সাধারণত সহজ পথ নিতে দেখা যায়—উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নির্বিচারে পাহাড় ও গাছ কাকা হয়। এর ফল ভবিষ্যতে মারাত্মক হতে পারে।'
 
 

Comments

The Daily Star  | English

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

12h ago