কেন এমনটা ঘটল, গভীরভাবে খতিয়ে দেখব আমরা: মাশরাফি

মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফাইল ছবি

ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গতকাল লোহাগড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় সবাইকে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

শনিবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে মাশরাফি বলেন, 'গতকাল আমাদের এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে এবং প্রতিটি মুহূর্তে পোড়াচ্ছে। সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন।'

'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনকে এক নিমিষে ম্লান করে দেবেন না। ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না।'

'ইসলাম শান্তির ধর্ম। আজীবন শান্তি ও সম্প্রীতির দূত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অজ্ঞতা থেকে হোক কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, কেউ যদি মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেউ যদি সত্যিই এমনটি করে থাকে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিচার হবে।'

'দেশের আইন আছে, প্রশাসন আছে, তারা ব্যবস্থা নেবেন। কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না। অভিযোগ যদি সত্যিও হয়, একজনের জন্য গোটা সমাজের নিরপরাধ মানুষদের ওপর অন্যায় করার কোনো অধিকার কারো নেই। কেউ সত্যি অপরাধ করলে তার বিচার আদালত করবে, তবে আমি-আপনি এজন্য কাউকে কোনো শাস্তি দিতে পারি না।'

'দয়া করে আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। উত্তেজিত না হয়ে একটু ভাবুন। ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটিয়ে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আমার নড়াইলকে এমন কলঙ্কিত করবেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'ঘটনা শোনামাত্র আমি স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে। তাৎক্ষণিক নড়াইলের পুলিশ সুপার, ডিআইজি মহোদয়, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি আমার স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও ঘটনাস্থলে দ্রুত পাঠিয়েছি, তারা যেন অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ায়। খুলনা থেকে র‍্যাব পাঠানো হয়েছে। এত কিছুর পরও ভীষণ দুঃখজনক কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে স্থানীয় বেশ ক'জন নেতাকর্মী আঘাত পেয়েছেন। তবে অসহায় মানুষের আর্তনাদের কাছে সেটা কিছুই নয়। একজন সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হলে সেই ক্ষতি অপূরণীয়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আমার মন কাঁদছে।'

'ঘটনার সময় শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে গেছি, ঘটনার পর আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা থেকে শুরু করে মানসিকভাবেও পাশে থাকব বলে কথা দিয়েছি। তাতে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ হবে না। তবে আপনাদেরকে বলছি, আমরা আপনাদের পাশে সর্বতোভাবে আছি। আপনারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করুন। এই দেশ, এই মাটি, এই আলো-বাতাস, আপনার-আমার সবার।'

'আবারও বলছি, এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা নিজেরা এভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ব, আমি এটা কখনোই ভাবতে পারি না। এই নড়াইলকে তো আমি চিনি না! একদিকে নবীর কটুক্তির কথা শুনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বুকে কষ্ট, অপরদিকে আমার ঘরপোড়া সনাতন ধর্মাবলম্বী মায়ের আর্তনাদ। এরকম নড়াইল গড়ার জন্য আমি আপনাদের সমর্থন চাইনি। আমরা সবাই মিলেমিশে চলব, বিপদে-আপদে পরস্পরের পাশে দাঁড়াব, যার যার ধর্ম পালন করব, এটাই তো আমাদের ঐতিহ্য।'

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, 'মসজিদের সম্মানিত ইমামদের আমি অনুরোধ করব, এই দুঃসময়ে আপনারা নিজ নিজ এলাকার মুসল্লিদের শান্তির ধর্ম ইসলামের বাণী বেশি বেশি শোনান। শান্তিপ্রিয় মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের কাহিনী শোনান। নবীজির জীবনের আদর্শ, তাঁর মূল্যবান বাণী শোনান। সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্মানিত পুরোহিতদেরও অনুরোধ করব, আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাণী তরুণ প্রজন্মসহ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন।'

'এই দেশ আমাদের, এই মাটি আমাদের। এই মাটি যেন কারো জন্য অনিরাপদ না হয়, ৭১-এর মতো বুক পেতে সবাইকে আগলে রাখতে হবে আমাদের; এক মুহূর্তও সেই আদর্শ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।'

'এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আর যেন কোনো ঘটনা না ঘটে, এজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নজরদারির অনুরোধ করেছি।'

'শান্তিপূর্ণ এই এলাকায় কেন এমনটা ঘটল, এটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখব আমরা। সব ধর্মের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমি এর মধ্যেই কথা বলেছি। আরও যা যা করণীয়, করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago