ঈদের আগের দিন দাম বাড়ার অপেক্ষায় গরু ব্যবসায়ীরা

ছবি: স্টার

ভালো দাম ও ক্রেতা থাকলেও বিক্রির আগ্রহ কম দেখা গেছে রাজধানীর কয়েকটি গরুর হাটের বিক্রেতাদের। তারা অপেক্ষায় আছেন, এবারও হয়তো গত বছরের মতো ঈদের আগের দিন দাম বেড়ে যাবে। 

সোমবার রাজধানীর গাবতলী, রূপনগর ও কচুক্ষেত এলাকার তিনটি গরুর হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। বিক্রি না করে রেখে দেওয়া হয়েছে বহুসংখ্যক গরু।

বিক্রেতারা জানান, গত বছরের অভিজ্ঞতায় তারা দেখেছেন, প্রথম দিকে খুব একটা বেচা-কেনা না হলেও ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় হুট করে গরুর দাম প্রায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়। সে কারণে এবারও তারা অপেক্ষায় আছেন, শেষ দিকে যদি দাম বাড়ে।

কয়েকটি হাটের গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগই কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, রাজবাড়ী, পাংশা, পাবনা, বগুড়া, জামালপুর, যশোর, ঝিনাইদহ ও সিরাজগঞ্জ এলাকা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন।

বিক্রেতারা জানান, গতবার যে গ্রাম থেকে দুই জন ব্যবসায়ী গরু নিয়ে এসেছিলেন, এ বছর সেই গ্রাম থেকে এসেছেন চার জন। তাদের মধ্যে অনেক সিজনাল ব্যাপারিও আছেন। যারা ঈদের আগের দিনের অপেক্ষায় আছেন।

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতে গরু রাখার ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া, বেশি আগে থেকে গরু কিনে যত্ন করাও ঝামেলার। তাই বেশিরভাগ মানুষ ঈদের আগের দিন গরু কিনতে চান। আর এই সুযোগটি কাজে লাগানোর অপেক্ষায় আছেন গরু ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা তাদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ গরু রেখে দিয়েছেন ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় বিক্রির অপেক্ষায়। তবে, শেষ দিনে দাম না বাড়লে, লোকসানে হলেও বিক্রি করতে হবে বেশিরভাগ গরু।

কুষ্টিয়া থেকে গাবতলী হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত বছর ২৮টা গরু নিয়ে এসেছিলাম। সব মিলিয়ে তিন লাখ টাকার মতো লাভ ছিল। তাই এবছর ৪৫টা গরু নিয়ে এসেছি।’

শফিকুল জানান, তিনি ২৫টার মতো গরু রেখে দেবেন ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাকিগুলো বিক্রি করবেন। কারণ, গতবারের মতো শেষদিনে এসে গরুর দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে।

সিরাজগঞ্জ থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছেন মো. মিজান। তিনি জানান, গতবার লাখ দুয়েক টাকা লাভ হয়েছিল। এবারও তিনি ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন।

মিজান বলেন, ‘গত বছর ঈদের আগের দিন প্রতিটি গরুর দাম ১০-১৫ হাজার টাকা করে বেড়ে গিয়েছিল। তাই এবার ১৩টি গরুর মধ্য থেকে পাঁচটি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রেখে দিতে চাই। যদি দাম বেড়ে যায়।’

গত শুক্রবার থেকে মূলত গরুর হাট জমজমাট হতে শুরু করে। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে গরু আসা শুরু হয়। মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত বেচা-কেনা চলবে।

পূর্ব শ্যাওড়াপাড়া থেকে গরু কিনতে হাটে গিয়েছিলেন ইরফান হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ইতোমধ্যে ঢাকার ছয়-সাতটা হাট ঘুরেছেন। প্রতিবছরই নানা হাট ঘুরে গরু কেনেন তিনি।

ইরফান বলেন, ‘কয়েকটা হাট ঘুরেও কম দামে গরু পাচ্ছি না। এখন অপেক্ষায় আছি শেষ দিনের, অনেক সময় শেষ দিনে গরুর দাম কমে যায়।’

তবে, তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করে বলেন, ‘গত বছর তো ঈদের আগের দিন গরুর দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এবারও যদি সেই অবস্থা হয়, তাহলে তো বেশি দামে কিনতে হতে পারে। এখন উভয় সংকটে আছি।’

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেতের গরু হাটে অনেক গরু উঠেছে। তবে, এখন পর্যন্ত বিক্রেতারাই গরুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। দামে না পোষালে বিক্রি করছেন না। অপেক্ষা করছেন ঈদের আগের দিনের।

রূপনগরে একটা গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তারপরও গরু ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন, শেষ দিকে যদি দাম বাড়ে। তারা জানান, মঙ্গলবার ঢাকার মধ্যে গরুর সংকট দেখা দিলে ক্রেতারা সেখানে যাবেন গরু কিনতে।

Comments

The Daily Star  | English

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

11h ago