হৃদয় স্যারের অপেক্ষায় তার শিক্ষার্থীরা
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল স্কুলে নেই ২০ দিন যাবত। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন ১৯ দিন। কারামুক্ত হওয়ার পর নিরাপত্তা ও চিকিৎসাজনিত কারণে তিনি ঢাকায় রয়েছেন।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে তাকে মিস করছে শিক্ষার্থীরা। তিনি বিজ্ঞান ও গণিত বিষয় পড়াতেন। শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে পড়াশুনায়ও পিছিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল একজন ভালো শিক্ষক। তিনি শিক্ষার্থীদের চমৎকার ভাবে পড়ান। তার অনুপস্থিতিতে গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পরছে।'
তিনি আরও বলেন, 'হৃদয় স্যার তার ইচ্ছে মতো আবার স্কুলে ফিরতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই। তিনি চাইলে ছুটিও নিতে পারেন। আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষেরও কোনো সমস্যা নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'স্কুলে মোবাইল ফোন আনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এর জন্য কড়া শাস্তির বিধানও আছে। শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসাতে কিছু শিক্ষার্থী খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে মোবাইল ফোন সঙ্গে এনে কথোপকথন রেকর্ড করেছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা হৃদয় স্যারকে ফাঁসাতে ফোন নিয়ে শ্রেণিকক্ষে আসে। তদন্ত করে এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
ঘটনার দিনের প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঘটনার দিন শিক্ষার্থীরা কথা শুনলেও বহিরাগতরা উত্তেজনা বাড়ায়। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতেও হামলা করে। শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মিলে গিয়েছিল। অনেক গণ্ডগোল হয়েছিল।'
তিনি বলেন, '২০ মার্চ শ্রেণিকক্ষে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথোপকথন হয়। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৪টায় স্কুল ছুটির পর ৭-৮ জন শিক্ষার্থী এসে দরখাস্ত দেয়। তারা স্কুলের বাইরে গিয়ে লিখে আনে দরখাস্তটি। এ ঘটনায় স্কুলের কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।'
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহমত উল্লাহ বলেন, 'আমরা গণিত বিষয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি, পড়াশুনাও ঠিকমতো হচ্ছে না। আমরা স্যারের ফেরার অপেক্ষায় আছি। তার সঙ্গে যা হয়েছে তার জন্য আমরা সবাই ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা চাই স্যার আবার ক্লাসে ফিরে আসুক।'
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, 'হৃদয় স্যারের সঙ্গে এমন ঘটনার জন্য আমরা লজ্জিত। আমরাও চাইনি আমাদের স্যারকে কারাগারে রাখা হোক। কিছু শিক্ষার্থীর উশৃঙ্খল আচরণের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই স্যার আবার ক্লাসে ফিরে আসুক।'
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ বলেন, 'কিছু শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের স্কুলের বদনাম হয়েছে। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা চাই, স্যার যেন ক্লাসে ফেরেন।'
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, 'কারাগারে দীর্ঘদিন যাবত থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। তাছাড়া তিনি ডায়াবেটিস রোগী। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আবার স্কুলের কোয়ার্টারে আসবেন। স্কুল ও এলাকার পরিবেশ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে ভালো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।'
ববিতা হাওলাদারের ভাই বাদল হাওলাদার বলেন, 'আমাদের পরিবারের সদস্যদের কটূক্তি করছেন বিভিন্নজন। কারাগারে থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা নির্দেশ করে যে, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।'
Comments