সিভিল কেস বেগুন খেতের মতো, এটা পরিবর্তন করতে হবে: আইনমন্ত্রী

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: সংগৃহীত

মামলার জট কমিয়ে আনতে সময় চেয়ে আবেদন না করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বলা হতো সিভিল কেস বেগুন খেতের মতো। এটা প্রচলিত ছিল। আমি তো শুনে শুনে বড় হয়েছি। এই জিনিসটা পরিবর্তন করতে হবে। সিপিসি যখন করা হয়েছিল তখন প্রযুক্তি এত উন্নয়ন হয়নি। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখান থেকে আমেরিকায় খবর পাঠাতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। পৃথিবী যখন এখানে চলে গেছে, আমার মনে হয় বলা আছে অমুকটার জন্য ৪৫ দিন সময় দিতে হবে, অমুকটার জন্য ৬০ দিন সময় দিতে হবে এগুলোর আর প্রয়োজন নেই।

মামলার জট কমাতে আদালতের খরচ বাড়ানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খরচ বাড়ালে মানুষ চিন্তু করবে আজ যদি আমি তারিখ নেই তাহলে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগবে। তখন মানুষ আর সময় নিতে চেষ্টা করবে না। এটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আরেকটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, আমরা সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারা বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছি। আজকের পৃথিবীতে নারীদের এভাবে বেইজ্জত করতে আমরা পারি না। ১৪৬ ধারা ৩ উপধারা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা যখন মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছিল, তখন আলোচনা হয়েছে। আমরা চিন্তা করছি, কতটা গেলে নর-নারী উভয়ের সমস্যার সমাধান করা যায়।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে বাক-স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার। বিশ্বাস করেন, গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে সংবিধান আছে কোথাও এর পরের জিনিসটা নেই। ভারতের সংবিধান দেখেন; যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংযোজন করে দিয়ে গিয়েছিলেন—সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। যেখানে বঙ্গবন্ধু এটা সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংযোজন করে দিয়ে গেছেন, সেখানে তার কন্যার সরকার এমন কোনো আইন কি করতে পারে যাতে বাক-স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়? না, এটা করতে পারে না এবং আমরা সেটা করিনি। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। সেসব সমস্যা হলো সাইবার ক্রাইম। আমাদের এই সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা করতে হবে। দণ্ডবিধি অনুযায়ী অনেক অপরাধ আছে যেগুলো আর ফিজিক্যালি করা হয় না, কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। সেটার বিচার করা হবে কীভাবে? সে জন্য তো একটা আইন করতে হবে। আমরা সে জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করার পরে কিছু মিসইউজ এবং অ্যাবিউজ যে হয়নি তা তো নয়। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট করেছিলেন। এটা করেছিলেন একটা বিশেষ কারণে। তখন মানুষ খাদ্য মজুত করতো, স্মাগলিং করতো। তখন প্রচলিত কাস্টমস আইনের স্মাগলিং ১৫৬ ধারার দিয়ে এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্টের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। আজ একটা ডিটেনশনের মামলা নেই কিন্তু স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট আছে। স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট কি খারাপ আইন? এটার ব্যবহার আপনারা কীভাবে করবেন এটাই বলে দেয় উদ্দেশ্য আপনাদের কী। 

আইনজীবীদের বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখবেন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে কোনো একটি ঘটনায় আদৌ মামলা হয় কি না। আগে দেখা যেত, থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হলেই একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হতো। আমি সেখানেও বলেছি যাতে এই মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে যেন কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয়। আদালত যদি মনে করেন এটা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ তাহলে সে রকম ব্যবস্থা নেবে। আর যদি মনে করেন, সমন দিলেই যথেষ্ট সমন দেবেন। তাই বলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে বাতিল করে ফেলতে হবে, আমি এটা সমর্থন করি না।

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

3h ago