‘নাম-ঠিকানা না পেয়ে’ অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া আসামি গ্রেপ্তার করল পিবিআই
চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের একটি বাসা থেকে ২০১৮ সালের ৩ মে সাগরপথে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ১৩ লাখ পিছ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আদালতে ১২ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছরের ২৭ অক্টোবর দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে পূর্ণাঙ্গ 'নাম ও ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া'র কথা জানিয়ে ২ রোহিঙ্গা নাগিরকসহ ৪ জনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়।
পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। ওই মামলায় ৪ বছর পলাতক থাকার পর নাম ও ঠিকানাবিহীন সেই ৪ আসামির একজনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম পিবিআই মেট্রো ইউনিট।
গতকাল রোববার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে শওকত সুমনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুনায়েদ কাউসার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামের হালিশহর থানার শ্যামলী আবাসিক এলাকার আশরাফ আলী ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে মিয়ানমারে যান। পরে সেখান থেকে একাই বোট চালিয়ে মিয়ানমার থেকে সাগর পথে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৩ লাখ ইয়াবার চালান আনেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকেসহ তার ভাই হাসানকে গ্রেপ্তার করে।'
তিনি আরও বলেন, 'মামলার তদন্তের সময়ে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় ১৩ লাখ ইয়াবার মালিক চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের ওরফে রেদোয়ান, রাশেদ মুন্নাসহ আরও কয়েকজনকে। একই মামলায় কক্সবাজারে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিমের সংশ্লিষ্টতাও মেলে। পরে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর এই মামলায় আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।'
'পরে আদালতের নির্দেশে সেখান থেকে মামলাটি সিআইডিতে আসে। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি এই চক্রের ১২ জনকে আসামি করে এবং নাম ও ঠিকানা না পাওয়ায় ৪ জনকে বাদ দিয়ে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত পুনরায় পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন', বলেন তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, 'মামলার তদন্তকালে অন্য আসামিরা তাকে শুধু সুমন নামে চিনতো এবং তার পুরো নাম জানতো না। আমরা তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে চিহ্নিত করতে সমর্থ হই এবং পরে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করি।'
'থাকেন দামি ফ্ল্যাটে'
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্থানীয়রা শওকত সুমনকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। শুলকবহর এলাকায় দামি ফ্লাটে থাকেন পরিবার নিয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনার পর কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন সুমন। কিন্তু, পরে আবার প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন। অন্য আসামিদের অনেকেই বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এই মামলার অন্যতম আসামি আশরাফ আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, উড়োজাহাজে করে মিয়ানমারে গেলেও ফেরেন সাগরপথে। ট্রলার ও স্পিডবোটে ইয়াঙ্গুন থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। বাহক হিসেবে তার ২০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল।
আশরাফের জবানবন্দি অনুযায়ী, এই ইয়াবার মালিক কক্সবাজারের সিআইপি সাইফুল করিম ও চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের ওরফে রেদোয়ান। ইয়াঙ্গুন থেকে ইয়াবার চালানটি পাঠান সেখানকার দুই রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ী। এই চক্রের আরও ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য আছে।
২০১৯ সালের ১০ জুন টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম হোতা সাইফুল পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন।
Comments