‘আমার রাগ পুলিশের ওপর না, রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ওপর’

শওকত আলী। ছবি: স্টার

নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই চালক শওকত আলী বলেছেন, 'আমার রাগ পুলিশের ওপর না, রাগ রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ওপর। অ্যাপ ব্যবহার করে যা আয় করি তার বেশিরভাগই তারা নিয়ে যায়। এ কারণে অ্যাপের ওপর রাগ করে মোটরসাইকেল পুড়িয়েছি।'

সোমবার রাত পোনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেন। 

শওকত আলী আরও বলেন, 'টিভিতে যেসব নিউজ হচ্ছে সেগুলো ঠিক না। পুলিশের ওপর আমার কোনো রাগ নেই।' 

আপনি সারাদিন পুলিশের কাছে কেন ছিলেন। পুলিশের সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'পুলিশ আমার কাছে জানতে চেয়েছে, যে গাড়িটায় আগুন দিয়েছি সেটা কার? তখন মোটরসাইকেলটি নিজের বলে জানালে পুলিশ বলে, গাড়িটা আপনার না। দেশের সম্পত্তি। গাড়িতে আগুন দিয়ে আপনি অপরাধ করেছেন কি না বলেন? পুলিশ আরও বলেছে, এটা মামলা হওয়ার মতো ঘটনা।' 

দ্য ডেইলি স্টার প্রতিনিধি তার কাছে জানতে চান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমরা দেখেছি আপনি পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। এখন অ্যাপের কথা বলছেন কেনো? তখন তিনি বলেন, 'আমি পেটের দায়ে রাইড শেয়ারিং করি। কিন্তু যা আয় করি তা যদি নিয়মিত মামলার জরিমানা হিসেবে দিই, তাহলে সব কাগজপত্র ঠিক রেখে লাভ কি।' তিনি আরও বলেন, 'আমি যেহেতু আর রাইড শেয়ারিং করবো না, তাই মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছি।'

শওকত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার বাড়ি কেরাণীগঞ্জের আটিবাজারে। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। কেরাণীগঞ্জের খোলামোড়ায় তার একটি হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। ব্যবসা করে কোনো রকম চলছিল কিন্তু লকডাউনের কারণে তার ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে সুদে-আসলে ৯ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত আছেন। অনেক দিন বেকার থাকার পর নিজের ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটা নিয়ে গত দেড় মাস ধরে রাইড শেয়ারিং করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত রাইড শেয়ারিং করেন। 

তিনি আরও জানান, এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টনে ট্রাফিক পুলিশ তাকে ধরে কাগজপত্র চেক করে কোনো সমস্যা না থাকার পরও চুক্তিতে যাত্রী পরিবহনের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। দুই-তিন দিন আগে সেই টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপর সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড্ডা লিংক রোডে আসলে একজন যাত্রী সিগনাল দেন। তিনি গাড়ি থামিয়ে যাত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় দুজন ট্রাফিক পুলিশ দৌড়ে গিয়ে তার কাগজপত্র চেক করে। সব কিছু ঠিক থাকায় বলা হয় অবৈধ পার্কিং করা হয়েছে। তখন তিনি নিজের অবস্থার কথা বলে হাতে-পায়ে ধরলেও পুলিশ মামলা লিখতে শুরু করে। 

তবে, শওকত আলীকে সারাদিন গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনারের অফিস রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তাকে আনিনি। সে নিজেই আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে। এ কারণে তাকে অফিসে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি অফিসের বাইরে থাকায় তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, সে অ্যাপ সিস্টেমের ওপর অভিমান করে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।'

তবে, সোমবার সকালে ভাইরাল হওয়া তার মোটরসাইকেল পোড়ানোর ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি পুলিশের ওপর রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 

এর আগে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই ব্যক্তি রাজধানীর লিংক রোড এলাকায় ট্রাফিক আইন অমান্য করায় দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট কাগজপত্র দেখতে চান। পরে তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।'

তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেল ও চালককে আমরা থানায় এনেছি। তাকে আটকের জন্য বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ার জন্য থানায় নিয়ে আসিনি। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।'

তবে, সোমবার সকালের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই মোটরসাইকেল চালক মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এই প্রতিক্রিয়ায় তিনি নিজের মোটরসাইকেলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন। আশেপাশের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন।

    

Comments

The Daily Star  | English

Fire service & civil defence: High-risk job, low pay

Despite risking their lives constantly in the line of duty, firefighters are deprived of the pay enjoyed by employees of other departments, an analysis of their organograms shows.

8h ago