মেডিকপসে বিএমএ নেতার সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন, সংগঠনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ

মেডিকপসে বিএমএ নেতার সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন, সংগঠনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (মেডিকপস) নথি | ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোনো দায়িত্বে নেই তিনি, নেই সরকারি চাকরিতেও। তারপরও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পরিচয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (মেডিকপস) সদস্য হয়েছেন ডাক্তার মো. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রামের 'প্রভাবশালী নেতা' হিসেবেও পরিচিত তিনি। চট্টগ্রাম বিএমএর সাধারণ সম্পাদক পদের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকও তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, ডাক্তার ফয়সল প্রভাব বিস্তার করে বছরের পর বছর ধরে তুলে নিচ্ছেন চমেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের টাকা। বিষয়টি নিয়ে সমবায় দপ্তরে অভিযোগ গেলেও হয়নি কোনো সমাধান।

সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (মেডিকপস) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবন্ধিত সমবায় সমিতি। প্রতি তিন বছর পর পর পরিচালনা কমিটি নির্ধারণে এই সমিতির নির্বাচন হয়।

মেডিকপস নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সুপারশপ ও দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। সংগঠনের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকে সেই টাকা। সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে আছে যেমন বিভেদ আছে, সেই সঙ্গে আছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।

এর মধ্যে ডা. ফয়সল ইকবালের সমিতির লভ্যাংশ 'হাতিয়ে' নেওয়ার বিষয়টি সবার মুখে মুখে। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে টানা লভ্যাংশ নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আরও অভিযোগ উঠেছে, মেডিকপস নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজের লোকদের দিয়ে নানাভাবে প্রভাব খাটান তিনি।

সমিতির নথি ঘেঁটে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পরিচয়ে ১৯৯৯ সালের ১২ জুলাই সদস্য হন ফয়সল। তার সদস্য নম্বর ৭৯২। তিনি কখনোই সরকারি চাকরি করেননি।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সমিতির একাধিক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সমিতির বর্তমান অফিস সহায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মানিক তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। লভ্যাংশের টাকা তিনিই ফয়সলের পক্ষে তুলে নেন এবং সমিতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করেন।

চট্টগ্রাম দুদকের সাবেক উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন এসব অভিযোগের তদন্ত করেন। তার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে মেডিকপসের সঙ্গে ফয়সলের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেছেন শরীফ। তাতে বলা হয়েছে, ফয়সল ইকবাল চৌধুরী সমিতির সদস্য হয়েছেন ২০১৯ সালে। তার অন্যতম সিন্ডিকেট কর্মচারী হিসেবে পরিচিত মানিক। তার মাধ্যমেই মূলত ডা. ফয়সাল সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মেডিকপস সুপারশপ থেকে প্রতিদিন বিপুল অংকের চাঁদা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।

সুপারশপটি সরকারি জমিতে নির্মিত। সরকারকে ভাড়া না দিলেও এই বাবদ দৈনিক ১০ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে।

মেডিকপসের সাবেক সভাপতি রতন কুমার নাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আগের কমিটির ফয়সাল সাহেবকে সদস্য করেছেন। উনি কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। আমরা এটি বন্ধ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মানিকদের কারণে সম্ভব হয়নি। মানিক উনার প্যানেলের লোক।'

রতন বলেন, 'গত ঈদে দুই বছর পর লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। যারা দিয়েছিলেন তারা কিন্তু এডহক কমিটির লোক। সমবায় নীতিমালা অনুযায়ী উনি (ফয়সল) সদস্য থাকতে পারেন না। এটা সমবায় দপ্তরে জানানো হয়েছে।'

এসব অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার আগের কমিটি তাকে সদস্য করেছে, আমি কিছুই করিনি।

'আমি টাকা তুলেছি সত্যি কিন্তু স্যারদেরকে না দিয়ে তো এটা আমি কিছুই করতে পারি না,' যোগ করেন তিনি।

মানিক আরও বলেন, 'এটার অডিট হয়েছে তখনো কিছু হয়নি। আমরা আগের কমিটির তালিকা ধরে টাকা দিয়েছি।'

মেডিকপসের নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পুরো বিষয়টি নিয়ে তিনি বিব্রত জানিয়ে ডা. মো. ফয়সল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ১৯৯৭ সালে যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ছিলাম সে সময় তারা আমার কাছে এসেছিল। আমি ১০০ টাকার বিনিময়ে সদস্য হয়েছিলাম। তারা এখন যা বলছে, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এখানে তথ্য গোপন করার কিছু নেই। ওরা মিথ্যা বলছে।'

তিনি বলেন, 'আমি কখনো ভোটা দিতেও যাইনি, খবরও নেইনি। আর সংগঠনে প্রভাব খাটানোর কিছু নেই। মানিক হলো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। ২০১৮ সালে তারা নীতি প্রণয়ন করেছে, আমি তার আগেই সদস্য হয়েছিল। তখন সরকারি-বেসরকারি কোনো কিছুই ছিল না। তারা বছরে লভ্যাংশে দেয়, আমি কোনোদিন এগুলো নেইনি। মানিককে আমি বলেছি এক-দুই হাজার টাকা তোমরা তুলে গরিবদের দিয়ে দাও, সেই হিসেবে সে দিয়ে দেয়।'

এই বিএমএ নেতা আরও বলেন, 'তাদের নিজেদের মধ্যেই কোন্দল রয়েছে। দুই গ্রুপ একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন শুধু একটা দোকান ছিল, এখন তো জায়গা দখল করে স্থাপনা করেছে। আমরা এগুলো তুলে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

6h ago