সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

ছবি: সংগৃহীত

মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা ছাড়াই বাসে বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটির অভিযোগ, বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে মালিকদের ইচ্ছেমতো ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুণে গুণে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়, সরকারি তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান ও অপদস্থ করা, জোর জবরদস্তি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা এবং এর প্রতিবাদ করলে কোনো কোনো বাসে যাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ ও যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানীর সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ জিম্মিদশার অবসানের জন্য ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-

১. ডিজেলচালিত স্টিকার লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিআরটিএ প্রণীত বাস ভাড়ার তালিকা বাসে বাসে স্থায়ীভাবে লাগানোর ব্যবস্থা করা।

২. মালিকদের নির্দেশে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের বিষয় নিশ্চিত করা।

৩. অন্যায়ভাবে কোনো যাত্রীকে যাতে কোনোভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্যের মাধ্যমে অপমান অপদস্থ হতে না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা।

৪. ওয়েবিলে যাত্রী গুণে ভাড়া আদায়ের নামে সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া-ডাকাতি বন্ধে শুধু মৌখিক ঘোষণা নয়, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. সির্টিং সার্ভিসে বাস চালালেও ভাড়া নির্ধারণের শর্তানুযায়ী গড়ে ৭০ শতাংশ যাত্রীবোঝাই করে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় বাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে। সিটিং সার্ভিস বিহীন বাসে দাঁড়ানো যাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে হবে।

৬. ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগে সিএনজিচালিত বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি হিউম্যান হলার, লেগুনা, টেম্পু, অটোরিক্সায় যে হারে ভাড়া নৈরাজ্য তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৭. যাত্রী প্রতিনিধি ছাড়া মালিক-সরকার মিলে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো ভাড়া বাতিল করে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ করা।

৮. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫৫ শতাংশ যাত্রী ৩ কিলোমিটারের কম দুরত্বে যাতায়াত করে। তাই সিটি সার্ভিসে সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ২ কিলোমিটার পর্যন্ত ৫ টাকা নির্ধারণ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ করতে হবে।

৯. ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএর প্রতীকি অভিযান বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরূদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেমন- রজনীগন্ধ্যা বা মনজিল পরিবহনের কোনো বাসে ভাড়ার তালিকা না থাকলে বা বেশি ভাড়া নেওয়া হলে ওই কোম্পানির এমডি/ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ওই কোম্পানির সকল বাস নিয়ম-নীতির মধ্যে আসতে বাধ্য হবে।

১০. দুরপাল্লার রুটে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে কিলোমিটার চুরি ও ভাড়ার তালিকা জালিয়াতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

১১. ভাড়া নির্ধারণের শর্ত লঙ্ঘন করে দৈনিক চুক্তিতে চালক-হেল্পারের কাছে বাস ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।

১২. গণপরিবহনে চাদাঁবাজি, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

১৩. কথায় কথায় যে কোনো ঠুনকো অজুহাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করার মতো আইন বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বার বার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ আবার চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঠা হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।'

যাত্রী সমিতির নেতারা জানান, নানা অনিয়ম ও অযৌক্তিক, ভুয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখন আবার রুটে রুটে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করে আরও ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, 'সরকার জ্বালানি তেলে ৭ বছরে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে টাকা দিয়ে ২০ বছর জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দেওয়া যেতো। পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে সড়ক, সেতু নির্মাণ ও বেশি দামে কেনাকাটার অর্থ যোগান দিতে তেলের দাম বাড়িয়ে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তেলের দামের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে গিয়ে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।'

মানবাধিকার সংগঠক নুর খান লিটন বলেন, 'জোর জুলুমের মাধ্যমে আদায়কৃত বাড়তি ভাড়ার অর্থ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের কাছে চলে যায়। ফলে প্রতিনিয়ত খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ দেখার কেউ থাকে না।'

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিজান মালিক, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম-মহাসচিব এম. মনিরুল হক, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

UN climate talks in limbo

The world's most climate-imperilled nations stormed out of consultations in protest at the deadlocked UN COP29 conference yesterday, as simmering tensions over a hard-fought finance deal erupted into the open

19m ago