ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্বেগ
২০২০ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনও সামগ্রিক উন্নতি হয়নি বলে যুক্তরাজ্য সরকারের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা ঠেকাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং নারীদের প্রতি অব্যাহত সহিংসতার কথা উল্লেখ করে হয়েছে।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্পর্কিত ২০২০ সালের 'ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস রিপোর্ট' শীর্ষক প্রতিবেদনটি যুক্তরাজ্যের সংসদে উপস্থাপন করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে রাজনৈতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মৃত্যুদণ্ড, গুম ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে ৩২টি মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ থাকা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক মিশনের সমালোচনা করেছিল।
প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে দেশে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা এবং বিদেশ ভ্রমণ না করার শর্তে ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়। পরে, কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও তিনি ২০২০ সালে ঢাকায় গৃহবন্দী ছিলেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ‘ক্রসফায়ার’ ও নির্যাতনের ঘটনাসহ ২২৫টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গত বছরের আগস্টে পুলিশ অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্তত ৩১ জনের গুম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে রিপোর্টার্স উইথ বর্ডারসের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম। এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বনিম্ন অবস্থান।
বেসরকারি সংস্থা আর্টক্যাল নাইনটিনের তথ্য অনুযায়ী, ৪৮১ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি মামলায় ৭৫ জন সাংবাদিককে আসামী করা হয়েছে। অন্তত ৩২ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করায় স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ ৪০০ জনের বেশি লোকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে পতিতাবৃত্তির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্ত করতে থাকা এক সাংবাদিক ৫৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে ভারত সীমান্তের কাছে পাওয়া যায় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে মন্দিরসহ সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়গুলোতে হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়। নভেম্বর মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করার পরিকল্পনায় ম্রো সম্প্রদায় বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় বিক্ষোভের বিষয়টিও উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য সরকারের ওই প্রতিবেদনে।
এছাড়া, নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
Comments