সেই মার্কোসের ছেলে ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্ট

ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়র। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেসরকারি ফলে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন দেশটির সাবেক একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফার্দিনান্দ 'বংবং' মার্কোস জুনিয়র।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার বিজয়ী মার্কোস জুনিয়র দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কোস জুনিয়র চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর তৈরিতে ইচ্ছুক।

চীনের সঙ্গে মার্কোস জুনিয়রের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের সীমা নির্ধারণে নতুন চুক্তি করতে পারেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মার্কোস জুনিয়রের সম্পর্কে জটিলতা আছে। তিনি হাওয়াই দ্বীপের জেলা আদালতের সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বিরাগভাজন হন।

১৯৯৫ সালে হাওয়াইয়ের আদালত ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের আমলে জনগণের সম্পত্তি লুটের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের আদেশ দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূ-রাজনৈতিক বৈরিতায় ফিলিপাইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। দক্ষিণ চীন সাগরের অংশবিশেষ ফিলিপাইনের সমুদ্রসীমার অন্তর্গত। কৌশলগত ও জলজ সম্পদের দিক থেকে এ সমুদ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন এ সাগরের ওপর নিজের আধিপত্য দাবি করে।

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে চীনের দাবির বিপক্ষে ফিলিপাইনের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে রায় দেওয়া হয়।

দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন দ্বীপে চীনের সামরিক স্থাপনা তৈরি নিয়ে দুচিন্তায় থাকা অন্যান্য দাবিদার রাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা এই রায়কে স্বাগত জানায়।

তবে নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কোস জুনিয়র বলেছিলেন, এই রায় 'কার্যকর নয়'। কারণ, চীন একে স্বীকৃতি দেয়নি।

তিনি চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই করার মাধ্যমে সব ব্যবধান দূর করার আশা প্রকাশ করেন।

মার্কোস জুনিয়র ডিজেআরএইচ রেডিওকে বলেন, 'আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রকে এখানে আসতে দেন, তাহলে চীন আপনার শত্রু হবে। ধারণা করছি, আমরা (চীনের সঙ্গে) চুক্তিতে আসতে পারবো। চীন দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমার বন্ধু। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি।'

মার্কোসের বাবা ফার্দিনান্দ সিনিয়র ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর দেশটি শাসন করেন। শুরুতে মার্কিনীদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও ১৯৭৫ সালে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তিনি মহাপ্রাচীরের দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান।

১৯৭৪ সালে ১৮ বছর বয়সী মার্কোস জুনিয়র তার মা ইমেলদার সঙ্গে বেইজিং সফরে যান। সেখানে তিনি চীনের নেতা মাও সে তুংয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

এরপর বেশ কয়েকবার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে মার্কোস জুনিয়র চীনে গেছেন। উইকিলিকস এর ফাঁস করা তথ্যে জানা গেছে, মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মার্কোস জুনিয়র অসংখ্যবার চীনে গিয়েছিলেন।

সম্প্রতি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষ করে, ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। তারা এ অঞ্চলে চীনের 'জবরদস্তি ও আগ্রাসন' ঠেকানোর কথা বলছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, 'ফিলিপাইনের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।'

তিনি জানান, মার্কিনীরা ম্যানিলার সঙ্গে তাদের বিশেষ অংশীদারিত্বের নবায়ন ও একটি নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছে।

'বন্ধু, অংশীদার ও মিত্র হিসেবে আমরা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে মুক্ত, সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ ও সহনশীল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলবো,' যোগ করেন প্রাইস।

'একই সঙ্গে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাব। এটি ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি', যোগ করেন তিনি।

গত ১৫ বছরে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে মার্কোস জুনিয়র একবারও যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। তার ও তার মায়ের বিরুদ্ধে ২টি পৃথক মামলায় ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার ও ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এ মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী রবার্ট সুইফট গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ যাবত মাত্র ৩৭ মিলিয়ন ডলার আদায় করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হলে মার্কোস কূটনৈতিক দায়মুক্তি পেতে পারেন। তখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে আর কোনো বাধা থাকবে না।

ফিলিপাইনের নির্বাচনের ফল চলতি মাসের শেষ নাগাদ চূড়ান্ত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শিগগিরই হয়তো জানা যাবে, চীন না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপাইনের বন্ধুত্ব বেশি গাঢ় হবে।

Comments

The Daily Star  | English
India visa restrictions for Bangladeshi patients

A wake-up call for Bangladesh to reform its healthcare

India’s visa restrictions on Bangladeshi nationals, while initially perceived as a barrier, could serve as a wake-up call for Bangladesh to strengthen its healthcare system and regain the confidence of its patients.

12h ago