তালেবান সরকার ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন ঘোষিত সরকারের শীর্ষ পদে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের 'অতীত কর্মকাণ্ড' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, নতুন সরকারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত না করায় সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।

কোনো নারী সদস্য ছাড়াই সংগঠনের অভ্যন্তর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। যাদের মধ্যে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা একজনকে প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাসবাদের' তালিকায় থাকা একজনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর তালেবানের সামরিক বিজয় হয় আফগানিস্তানে। এর তিন সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার নতুন সরকারের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে, সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে শাস্তি স্থাপনের বিষয়ে কোনো সংকেত নেই।

নব্বইয়ের দশকের নিষ্ঠুর ও নিপীড়ক তালেবান সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী ছিলেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার, যিনি ২০২০ সালে মার্কিন প্রত্যাহার চুক্তি সইয়ের তত্ত্বাবধান করেছিলেন, তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। যাকে ওয়াশিংটন একটি 'সন্ত্রাসী' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আল-কায়েদা ও আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তিনি এফবিআইয়ের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ব্যক্তিদের একজন।

তালেবান ঘোষিত সরকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আফগানিস্তানের নতুন সরকারের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে তালেবানদের মনোনীত কয়েকজনের 'সংশ্লিষ্টতা ও তাদের অতীত কর্মকাণ্ড' নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'আমরা নতুন সরকারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা দেখেছি। সেখানে কেবল তালেবান সদস্য বা তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ঠাঁই পেয়েছেন। কোনো নারী সদস্য নেই। তা ছাড়া আমরা ওই মন্ত্রিসভায় কয়েক জনের অন্তর্ভুক্তি ও তাদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বুঝতে পেরেছি, তালেবান এটাকে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যাই হোক, আমরা তালেবানকে কথায় নয়, তাদের কাজের মাধ্যমে বিচার করব।'

চীন

আফগানিস্তানে 'তিন সপ্তাহের নৈরাজ্যের' অবসানকে স্বাগত জানিয়ে বেইজিং কাবুলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তালেবানকে সে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।

আমেরিকান সৈন্যদের প্রত্যাহারের বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। যেটাকে তারা পরিকল্পিত ও তাড়াহুড়ো বলেও সমালোচনা করেছে। বুধবার চীন জানিয়েছে, নতুন সরকার দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে।

নতুন সরকারের ঘোষণা সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'এর মাধ্যমে আফগানিস্তানে তিন সপ্তাহের বেশি নৈরাজ্যের অবসান ঘটল এবং দেশটি পুনর্গঠন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।'

যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে 'ওয়েট অ্যান্ড সি' কৌশল অবলম্বন করছে। তবে, তালেবানরা আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পর চীন জানিয়ে দিয়েছে, তারা তালেবানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, আফগানিস্তানে তালেবানদের 'তত্ত্বাবধায়ক' সরকারের ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সরকারে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি মানতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইইউ মুখপাত্র বলেছেন, 'ঘোষিত তালিকার প্রাথমিক বিশ্লেষণের পর, এটি আফগানিস্তানের সমৃদ্ধ জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের দিক থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক বলে মনে হচ্ছে না। তালেবানরা যেটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।'

তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, তিনি সাবধানের সঙ্গে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের এক সরকারি সফরের সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা জানি না এই অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা কতদিন স্থায়ী হবে। তবে, আমাদের যা করতে হবে, তা হলো এই প্রক্রিয়াটি সাবধানে অনুসরণ করা।'

জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, 'বৈশ্বিক সংস্থাটি সরকারের স্বীকৃতির কাজে জড়িত নয়।'

'এটি এমন একটি বিষয় যা সদস্য দেশগুলো করে, আমাদের কাজ না। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, আজকের ঘোষণার বিষয়ে বলা যায়, কেবল একটি সমঝোতার মাধ্যমে ও সামগ্রিক নিষ্পত্তি আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি আনবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt yet to receive any letter from Tulip: Shafiqul

Tulip has written to Yunus as she wants to meet him in London to clear up a "misunderstanding" after corruption allegations made by the interim govt led her to resign from the UK government

37m ago