রাশিয়ার সঙ্গে চীনের একাত্মতায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বালিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বালিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং এ ব্যাপারে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

আজ রোববার রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, গতকাল শনিবার ২ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় ৫ ঘণ্টা ফোনে আলাপ করেন। এ সময় বেইজিংয়ের মস্কোর সঙ্গে একাত্ম থাকার বিষয়টি নিয়ে ব্লিঙ্কেন উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

উভয় কূটনীতিক তাদের আলোচনাকে 'খোলামেলা' বলে অভিহিত করেছেন। এই আলোচনার একদিন আগেই তারা ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে অনুষ্ঠিত জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে অংশ নেন।

ব্লিঙ্কেন বলেন, 'আমাদের সম্পর্কে নানা রকম জটিলতা থাকলেও, আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, দুই দেশের প্রতিনিধিরা আজকের আলোচনাকে ফলপ্রসূ, খোলামেলা ও গঠনমূলক বলবেন।'

ব্লিঙ্কেন জানান, তিনি মনে করেন না রাশিয়া প্রসঙ্গে চীন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে।

ব্লিঙ্কেন আরও জানান, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার পথ খোলা আছে।

'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক শুধুমাত্র এই দুই দেশের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই সম্পর্ক, বা অন্যভাবে বলতে গেলে প্রতিযোগিতার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ', যোগ করেন ব্লিঙ্কেন।

ব্লিঙ্কেন জানান, ১৩ জুন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোন কলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিষয়টি পরিষ্কার করেন, যে চীন, রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কিছুদিন আগেই বেইজিং ও মস্কো ঘোষণা দেয়, দুই দেশের সম্পর্কের 'কোনও সীমা নেই।'

মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেন, যদি চীন ইউক্রেনের যুদ্ধে মস্কোকে কোনও ধরনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে, তাহলে তাদেরকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন তারা।

ফোনকলে তাইওয়ান প্রসঙ্গে চীনের বাড়তে থাকা উসকানিমূলক বক্তব্য ও দেশটির সীমান্তের কাছাকাছি কিছু 'উদ্যোগ' নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্লিঙ্কেন।

তিনি তিব্বত ও পশ্চিমের জিনজিয়াং প্রদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মানবাধিকার প্রসঙ্গেও কথা বলেন।

আলোচনা ফলপ্রসূ: চীন

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বক্তব্যে জানায়, ২ দেশ বৃহত্তর পরিসরে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করতে একমত হয়েছে। একই সঙ্গে, বক্তব্যে ওয়াশিংটনের কিছু উদ্যোগের বিরুদ্ধে আপত্তিও জানানো হয়, যার মধ্যে আছে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অপমান ও একে আক্রমণ করার অভিযোগ।

মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং জিনজিয়াং, হংকং ও দক্ষিণ চীন সাগর সম্পর্কে মার্কিনদের কিছু ভুল ধারণা খণ্ডন করেন।

ওয়াং শিগগির চীনের পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার নামে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করা থেকে আমেরিকাকে বিরত থাকার উপদেশ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং।

বক্তব্যে আরও বলা হয়, 'উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক হয়েছে, যেটি দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার উন্নয়ন করবে, ভুল বোঝাবুঝি ও ভুল ধারণা কমাবে এবং ভবিষ্যতে আরও উচ্চ পর্যায়ের আদানপ্রদানের জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করবে।'

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছিলেন এটি মার্কিন-চীন সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখতে এবং অপ্রয়োজনীয় সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য আয়োজন করা হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন চীনকে তাদের সবচেয়ে বড় কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং তারা ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, কোনো এক সুবিধাজনক সময় চীন স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের দখল নেওয়ার চেষ্টা চালাবে।

২ দেশের মধ্যে বৈরিতা থাকলেও দেশগুলো একে অপরের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারের তালিকার ওপরের দিকেই আছে। ট্রাম্পের আমলে চীনের পণ্য আমদানির ওপর আরোপিত কিছু কঠোর শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে বাইডেন প্রশাসন কাজ করছে। এ উদ্যোগে ২ দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উষ্ণ হতে পারে। এতে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হবে, যেটি এ মুহূর্তে মার্কিনদের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা।

 

Comments

The Daily Star  | English

Sinner dethrones Alcaraz to capture maiden Wimbledon crown

Jannik Sinner downed Carlos Alcaraz 4-6, 6-4, 6-4, 6-4 on Sunday to win his first Wimbledon title, gaining sweet revenge for his painful defeat in the French Open final.

2h ago