হাসপাতাল কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

৪ মিনিটের মাথায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন সিনিয়র এএসপি আনিসুল

ASP_Anisul.jpg
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম | ছবি: সংগৃহীত
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ১৫ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ থেকে ছয় জন কর্মচারী আনিসুলকে জোর করে একটি ছোট ঘরে নিয়ে গিয়ে মেঝের ওপর ঠেসে ধরে কাপড় দিয়ে হাত-পা বাঁধার চেষ্টা করছেন। ঠিক চার মিনিটের মাথায় আনিসুল নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আনিসুলের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের দাবি, হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে আনিসুল নিহত হয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও একই ধারণা করছেন।
 
আনিসুলের ভাই রেজাউল করিম বলেন, ‘পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে মানসিক সমস্যা ভুগছিলেন আনিসুল। যে কারণে গতকাল সকালে তাকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধরে তিনি নিহত হন।’
 
রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, ‘গতকাল সকাল ১১টার দিকে আমরা হাসপাতালে যাই। সঙ্গে আমার বোন এবং বোন জামাই উপস্থিত ছিলেন। তারাও পেশায় চিকিৎসক। হাসপাতালে যাওয়ার পরে আনিসুল খাবার খেয়েছিলেন। এরপরে শৌচাগারে যেতে চান। হাসপাতালের কর্মচারীরাই তাকে শৌচাগারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় হয়তো তিনি কর্মচারীকে সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে পারেন। যে কারণে হাসপাতাল কর্মচারীরা তাকে মারধর করেন এবং আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্মচারীরা আমাদের জানিয়েছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক বলেছেন, বলপ্রয়োগ করায় তার মৃত্যু হয়েছে।’
 
ফুটেজে আরও দেখা যায়, আনিসুল নিস্তেজ হয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্মচারীরা বারবার সিটিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছিলেন। সাত মিনিটের মাথায় অ্যাপ্রোন পরা এক নারী ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে পালস চেক করেন। ১০ মিনিটের মাথায় অ্যাপ্রোন পরা আরও একজন ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন নারী চিকিৎসক দরজা বন্ধ করতে বলেন। সে সময় বুকে পাম্প করলেও সাড়া দিচ্ছিলেন না আনিসুল।
 
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালের কিছু কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। আলামত হিসেবে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেটা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আটক কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা বিস্তারিত বলতে পারবো।
 
মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক মো. ইমরান খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যখন ভর্তি প্রক্রিয়া চলছিল তখন আনিসুল খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি সবাইকে মারধর করছিলেন। আমরা শুনেছি, জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে তাকে এখানে আনা হয়েছিল। সেখানে তাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। আমরা কোনো ওষুধ দিইনি। তাকে শান্ত করার জন্য একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
 
সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সে সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলাম না। যে কারণে প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিল তা বলতে পারছি না।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ মঙ্গলবার সকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সেলিম রেজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে ভিসেরাসহ কিছু পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন হাতে এলে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ বলা সম্ভব হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

3h ago