জরাজীর্ণ দশায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি

অযত্নে পড়ে রয়েছে পাবনায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। ছবি: স্টার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িটি অযত্নে ও অবহেলায় জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বাড়িটি দখলমুক্ত করার পর থেকে এই অবস্থা।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়েছিল, দখলমুক্ত করার পর ওই বাড়িতে জাদুঘর করতে হবে। অথচ সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর তৃতীয় বার্ষিকীতে সীমান্তের দুই পারের বাঙালিরা যখন আজ তাঁকে স্মরণ করছেন তখন বাড়িটিতে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।

সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘদিনের অযত্নে বাড়ির সামনের জায়গাটিতে বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। বাড়ির বেশ কয়েকটি দরজা ও জানালাও উধাও হয়ে গেছে। এছাড়াও সামনের পুরো জায়গাটিতেই ফেলা হয়েছে আবর্জনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকসেবীরা বাড়িটিকে তাদের বেআইনি কার্যকলাপের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা জেলার বেলকুচি উপজেলার ভাঙাবাড়িতে দাদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন। তার বাবা করুণাময় গুপ্তের বাড়ি ছিলো গোপালপুরে। সেদিক থেকে  গোপালপুরেই সুচিত্রা সেনের প্রথম নিবাস।

জন্মের পর তার নাম রাখা হয় রমা দাসগুপ্ত। কৈশোর পর্যন্ত ছোট জেলাশহরে থাকেন তিনি। সেখানেই তার স্কুল জীবন কাটে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কয়েক মাস পর তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। এখন এই বাড়িটি ছাড়া পাবনায় সুচিত্রা সেনের আর কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই বললেই চলে।

অভিনয় ও সৌন্দর্যের জন্য তিন দশক ধরে বাঙালিদের জননন্দিত এই নায়িকা ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

সুচিত্রা সেনের বাড়ি দখলমুক্ত করার আন্দোলনের সংগঠকদের একজন নাট্যশিল্পী মুস্তাফিজুর রহমান রাসেল। বাড়ির বর্তমান অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সুচিত্রা সেনের বাড়ি এমন অবহেলায় পড়ে রয়েছে এটা খুবই হতাশাজনক।”

জামায়াতে ইসলামি সমর্থিত প্রতিষ্ঠান ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট ১৯৮৭ সাল থেকে বাড়িটিতে ইমাম গাজ্জালি ইনস্টিটিউট নামে শিশুদের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেখানে সুচিত্রার স্মৃতি সংরক্ষণে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ গড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বাড়িটি ছেড়ে দেয় দখলদাররা।

দখলমুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আরেকজন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, সরকার বাড়িটি দখলমুক্ত করলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো জাদুঘর তৈরি করেনি। বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে পাবনার মানুষ আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবেন।

ঐতিহাসিক এই বাড়িটির দুর্দশার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দুষছেন পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রানি বালো। তিনি বলেন, বাড়িটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। আদালতের নির্দেশনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন নির্দেশনা দেয়নি।

জেলা প্রশাসন নিজে থেকেই মাঝেমধ্যে কিছু কাজ করে বলে যোগ করেন তিনি।

এমন অবস্থায় দখলদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলছেন বাড়িটি এভাবে পড়ে থেকে ধ্বংসের দিকে গেলে তাদের আন্দোলন ও দীর্ঘ আইনি লড়াই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

55m ago