কে-পপ ব্যান্ড বিটিএসের গল্প
কে-পপ বয় ব্যান্ড বিটিএস, সাত জন সুপারস্টার বয় এই ব্যান্ড তৈরি করেছেন এবং সময়ের সঙ্গে তারা একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন।
আকর্ষণীয় সঙ্গীত, স্লিক মুভ এবং অসংখ্য ফ্যানবেস (আর্মি) বিটিএসকে বিশ্বজুড়ে চার্টের শীর্ষে নিয়ে গেছে।
এখানে তাদের রেকর্ড, সদস্য, তারা কী করেছে এবং ম্যাকডোনাল্ডসের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার কথা তুলে ধরা হবে।
বিটিএসের জন্ম
বিটিএস একটি দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপভিত্তিক বয় ব্যান্ড। ২০১৩ সালে এটি আত্মপ্রকাশ করেছিল। ব্যান্ডটির নাম কোরিয়ান বাক্যাংশ 'বাংতান সোনিওদান' এর সংক্ষিপ্ত রূপ যার বাংলা অর্থ 'বুলেটপ্রুফ বয় স্কাউটস'। কিন্তু… বিশ্বব্যাপী ভক্তদের কাছে তারা বিটিএস হিসেবে পরিচিত, যার অর্থ 'বিয়ন্ড দ্য সিন'।
বিটিএস সদস্য, মোট সদস্য ৭
আরএম
একসময়ের র্যাপ মনস্টার এখন শুধু আরএম হিসেব পরিচিত। তিনি বিটিএসের নেতা এবং সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন। ছোট থাকতে নিউজিল্যান্ডে কয়েক মাস পড়ালেখা করেছিলেন তিনি।
জিন
২৮ বছর বয়সী জিন দলের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য। তিনি এই ব্যান্ডের একজন গায়ক।
সুগা
সুগা একজন র্যাপার। কিন্তু, প্রথমদিকে তিনি প্রযোজক হতে চেয়েছিলেন।
জে-হোপ
এই ব্যান্ডের সৃজনশীল সদস্যদের একজন জে-হোপ। তিনিও একজন র্যাপার। বিটিএসের জন্য বেশ কয়েকটি হিট গান লিখেছেন তিনি। এছাড়া, নাচের রিহার্সেলের দায়িত্ব পালন করেন।
ভি
গায়ক ভি একজন অভিনেতা। একসময় নেভারের একটি জরিপে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সঙ্গীতশিল্পী নির্বাচিত হয়েছিলেন। নেভার একটি নেতৃস্থানীয় কোরিয়ান ওয়েবসাইট।
জাংকুক
২৩ বছর বয়সী জাংকুক বিটিএসের অন্যতম সদস্য। তিনি একজন অলরাউন্ডার। তিনি যখন এই ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৫ বছর।
জিমিন
বিটিএসে সবার শেষে যোগ দেওয়া সদস্য জিমিন। তিনি এই দলের প্রধান গায়ক এবং সেরা নৃত্যশিল্পী।
সংগীত
গত কয়েক বছর ধরে কে-পপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, কারো কাজ বিটিএসের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত শিল্পী। বিটলসের পর তারাই দ্রুততম ব্যান্ড হয়ে ওঠে যাদের অ্যালবাম যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ অবস্থান অর্জন করেছে। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তারা এটি করেছে।
বিটিএস ২০২০ সালের আগস্টে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বাধিক ইউটিউব ভিউয়ের রেকর্ড ভাঙে। তাদের প্রথম ইংরেজি গান 'ডায়নামাইট' এর ভিডিও মাত্র একদিনে ১০১.১ মিলিয়ন ভিউতে পৌঁছায়।
চলতি বছরের ২১ মে তারা আবার নিজেদের রেকর্ড ভেঙেছে। এসময় তাদের দ্বিতীয় ইংরেজি গান 'বাটার' এর ভিউ ছিলো ১০৮.২ মিলিয়ন। অবশ্যই এটি বিরাট অর্জন!
পারফরম্যান্স
সবমিলিয়ে বিটিএস লাইভ শোতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে। তাদের চলন এবং মিউজিক ভিডিওগুলো অনেক আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। আর এসব কঠোরভাবে মনোযোগ ধরে রাখেন তারা। প্রতিটি পারফরম্যান্স সঠিক করতে তারা প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা অনুশীলন করে।
ভক্ত
বিটিএসের সাফল্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভক্ত বা সমর্থক। ইনস্টাগ্রামে তাদর ৪৩ মিলিয়নের বেশি ফলোয়ার আছে। টুইটারে আছে ৩০ মিলিয়নের বেশি এবং ফেসবুকে ১৮ মিলিয়নের বেশি। এছাড়া, ইউটিউবে আছে ৫১ মিলিয়নের বেশি ও চ্যানেলে ১০ বিলিয়নেরও বেশি বেশি ভিউ হয়েছে।
বিটিএস ভক্তরা আর্মি (এআরএমওয়াই) নামে পরিচিত এবং বিশ্বের যে কোনো ব্যান্ড বা শিল্পীর চেয়ে আবেগপ্রবণ তাদের ভক্তরা। আর্মির অর্থ 'অ্যাডোরেবল রিপ্রেজেন্টেটিভ এমসি ফর ইয়ুথ'।
তাদের ভক্তরা একটি বার্ষিক রিক্রুটের অংশ এবং তারা অফিসিয়াল ক্লাবে যোগ দেয়। অনুমান করা হয় যে, বিটিএস আর্মির ৫০ মিলিয়ন রিক্রুট সদস্য আছে।
বিটিএস মিল
বিটিএস ব্যান্ডের তারকা বর্তমান সময়ের বড় তারকা হলেও তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। দলটি এখনো একটি আস্তানাতে একসঙ্গে থাকে। যে স্থানটি কিছু কে-পপ গ্রুপের জায়গা হিসেবে পরিচিত।
বিটিএসের সবাই একসঙ্গে বাস করে, কাজ করে, ভ্রমণ করে। ম্যাকডোনাল্ডস তাদের সহযোগিতা করে থাকে। তারা বিটিএসের নামে একটি খাবার সরবরাহ করে থাকে।
বিটিএস ম্যাকস খাবারটি ১০টি চিকেন নগি দিয়ে তৈরি। এরসঙ্গে থাকে ছেলেদের পছন্দের শেকার ফ্রাই ও পিস ডি রেজিস্ট্যান্স ও সীমিত আকারে সুইট চিলি সস এবং একটি ক্যাজুন। (দ্রষ্টব্য এটি কোনো বিজ্ঞাপন নয়। বরং এটি প্রমাণ করে বিটিএস কতটা বড় এবং ম্যাকাস তাদের নামে খাবার সরবরাহ করে। যা বিশ্বে প্রথম।)
বিটিএসের কাছে প্রত্যাশা
কোনো সন্দেহ নেই এখানে উল্লেখ করা পরিসংখ্যান এবং সময়ের সঙ্গে বয়স বাড়তে থাকবে। তাদের আরও গান আসবে, তারা আরও ট্যুর ঘোষণা করবে, আর্মি রিক্রুট করবে। কিন্তু, বিটিএস যদি তাদের গানের মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে তাহলে তা বিশ্বের তরুণ সমাজের জন্যও ইতিবাচক হবে।
তাই এই লেখাটিও শেষ করছি বিটিএস ফ্রন্টম্যান আরএমের কথা দিয়ে। যিনি জাতিসংঘে (এবং হ্যাঁ, তারা সেখানেও ইতিহাস তৈরি করেছিল, প্রথম কে-পপ গ্রুপ হিসেবে তাদের জাতিসংঘে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল) নিজেকে আবিষ্কারের কথা বলেছিলেন এবং অন্যান্য তরুণদেরও একই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরএম বলেছিলেন, 'আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। আমার অনেক দোষ আছে এবং আমার অনেক ভয়ও আছে। তবে, আমি যতটা সম্ভব নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছি এবং ধীরে ধীরে নিজেকে ভালবাসতে শুরু করেছি। তোমরাও তাই করবে। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মেধাকে খুঁজে বের করবে।'
Comments