সারাজীবন স্বচ্ছতা-সততার মধ্যে থেকেছি, আগামীতেও থাকব: ইলিয়াস কাঞ্চন

Ilias kanchan
ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত ইলিয়াস কাঞ্চন এবারের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার মূল কারণ কী?

দেখুন, আমার আসলে নির্বাচনে আসার কথা ছিল না। এ দেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালবাসেন এবং সম্মান করেন। চলচ্চিত্রের মানুষরাও আমাকে অনেক ভালবাসেন। কাজেই এখান থেকে নতুন করে চাওয়া বা পাওয়ার কিছু নেই। নতুন করে সম্মান বাড়ারও কিছু নেই। আমার প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ বেশ কয়েকদিন আমার কাছে এসেছেন। সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা বলেছেন। তারপর আমাকে কনভিন্স করতে পেরেছেন। নিপুণের কথা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। একটা পরিবর্তন আসতে হবে। শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা দরকার। তাই সব ভেবে স্থির করি সভাপতি পদে আমি নির্বাচন করব। তারপরই করেছি। এছাড়া আমার ছেলে জয় ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আমার ছেলে বলে –সারাদেশের জন্য এতকিছু করছ, এত মানুষ তোমাকে চেনে-ভালোবাসে, এখন তোমার উচিত চলচ্চিত্রের জন্য কিছু করা। এটা আমাকে বড় একটা সাহস জুগিয়েছে।

শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অনেক আগে, তখন কি কোনো দ্বন্দ্ব হতো?

না। অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল সবার সঙ্গে। ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এক সমিতির সঙ্গে অন্য আরেক সমিতির ঝগড়া বা দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, কেউ কাউকে বাদ দিয়ে সিনেমা বানাতে পারেন না। সিনেমা একার কাজ নয়। সবাইকে লাগবে। আমার কথা হচ্ছে আমি কোনো কাজ করব সম্মানের জন্য। সম্মানের জায়গা থেকে কাজ করব। নীতি নিয়ে সারা জীবন চলেছি। সেভাবেই চলব। চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার। আমি চাইব নতুন নেতৃত্ব হবে সবার জন্য কাজ করতে। সব শিল্পীর জন্য কাজ করব। সিনেমা রিলেটেড সবার জন্য কাজ করব।

আগের কমিটি নিয়ে কোনো মন্তব্য?

আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলব না। সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমরা একই পরিবার। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। কারো সঙ্গে এককভাবে না। শিল্পীদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলে চলবে না। সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই সিনেমার উন্নয়ন হবে।

শিল্পীদের দুঃস্থ শিল্পী বলা হয়, এই বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

শিল্পীরা কেন দুঃস্থ হবেন? শিল্পীরা থাকবেন সম্মানের জায়গায়। শিল্পীরা কাজ করবেন। শিল্পীদের জন্য চাল ডাল বিতরণের দৃশ্য লাইভ করে সবাইকে দেখানোটা দুঃখজনক। এজন্য সিনেমা নির্মাণ যদি বাড়ে তাহলে কিন্তু শিল্পীদের সাহায্যের আশায় থাকতে হবে না। তারা কাজ করতে পারবেন। সাহায্য নিয়ে চললে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াবে না।

চলচ্চিত্রে একটা সংকট চলছে এই বিষয়ে কী বলবেন?

সংকটটা একদিনে হয়নি। সংকট মোকাবিলার জন্য সবাইকে একত্রিত হয় কাজ করতে হবে। জয়ী হতে পারলে সরকারের কাছে প্রণোদনা চাইব। সেই প্রণোদনা দিয়ে সিনেমার উন্নয়ন করা হবে। সরকার হল সংস্কারে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ সেই টাকা কেউ নিচ্ছেন না। সংস্কার করে হল মালিকরা করবেন বা কী? যেখানে সিনেমাই হচ্ছে না সেভাবে। যেভাবে হওয়া দরকার। হলে সিনেমা না থাকলে প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করে কী হবে? ঋণ নিলে সুদ তো দিতে হবে? এটা ভেবে হল মালিকরা ঋণ নিচ্ছেন না। এখন সরকার যদি সিনেমা বানানোর জন্য আলাদা করে প্রণোদনা দেন তাহলে কিন্তু সিনেমার সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহও ভালো ভাবে চলবে। যদি বিজয়ী হতে পারি তাহলে সবাইকে নিয়ে সরকারের কাছে যাব, সংকটের কথা বলব। বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রবান্ধব, নিশ্চয়ই আমাদের কথা শুনবেন। আমাদের সবার প্রিয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও চলচ্চিত্রবান্ধব। সরকারকে কিছু পরিকল্পনা দিতে চাই। কিভাবে সিনেমার সংখ্যা বাড়বে সেই পরিকল্পনা করে এগোব।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ ও দেশকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা অনেকদিন ধরে করে আসছেন, এই ভাবনাটা কিভাবে আসে?

তাহলে অনেক পেছনে ফিরে যেতে হবে। ছোটবেলায় সিনেমা দেখতাম সেই সময় মনে হতো আমি যদি অভিনয় করতে পারতাম? মায়ের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখতাম। আর ভাবতাম এইসব। তারপর নিয়তি আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। অনেক সিনেমা করেছি। অনেক পেয়েছি এখান থেকে। বহু আগে থেকে আমার ভেতরে কাজ করে সমাজের ও দেশের জন্য কিছু করব। তারপর তো করেই চলেছি। সব সময় চেয়েছি ভাল কাজ করব। মানুষের জন্য করব। নিজের কথাটা শুধু না ভেবে সবার কথা ভেবেছি। আরেকটি বড় কথা হচ্ছে দেশ প্রেম। দেশ প্রেম থাকতে হবে। এটা সকলের ভেতরে গভীরভাবে থাকা উচিত।

একটা জীবন কিভাবে কাটিয়ে দিলেন?

সারাজীবন স্বচ্ছতা ও সততার মধ্যে থেকেছি-আগামীতেও থাকব। আল্লাহ আমার সঙ্গে আছেন। মানুষের কল্যাণ আমার জীবনের কাম্য। কখনো মানুষের ক্ষতি করিনি। ক্ষতি করার চেষ্টাও করিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago